বান্দরবানে খেলার মাঠের অভাব রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। পার্বত্য জেলা হওয়ায় বিভিন্নস্থানেই ছোট বড় পাহাড় থাকায় খেলার মাঠ তৈরি না হওয়ায় খেলোয়াড়দের বিনোদনের সুযোগ দিন দিন কমে আসছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বান্দরবান জেলা সদরে খেলার উপযোগী রাজার মাঠেই বছরের বিভিন্ন সময় চলে নানারকম অনুষ্ঠান, আর ঈদগাঁহ মাঠটি পুরোপুরি সিমেন্ট দিয়ে পাকা করায় খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হয়েছে ক্রীড়াবিদরা। অন্যদিকে জেলা সদরের স্টেডিয়ামে শুধু নির্ধারিত খোলোয়াড়রা অনুশীলন করে থাকেন।
এদিকে খেলার মাঠের অভাবে শিশু-কিশোররা যেখানেই সুযোগ পাচ্ছে মেতে উঠছে খেলাধুলায়। মাঠের এই সংকটের কারণে এখন সাংগু নদীর জেগে ওঠা চরেই নিয়মিত চলছে ফুটবলের জমজমাট আয়োজন। শুধু নদীর চরেই নয় কারো পরিত্যক্ত জমি পেলে সেখানেও ফুটবলের নিয়মিত অনুশীলন করছে শিশু-কিশোররা। শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে মাঠের দাবি স্থানীয় খেলোয়াড়দের।
সাংগু নদীর জেগে ওঠা চরে ফুটবল খেলায় ব্যস্ত মো. কায়েফ বলে, বান্দরবান জেলা সদরে মাঠের বড় অভাব আর তাই আমরা সাংগু নদীর জেগে ওঠা চরে প্রতিদিন বিকেলে ফুটবল খেলি।
আশপাশের অনেক খোলোয়াড় আমাদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে আসে। ফুটবল খেলতে গিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট হয়, নদীর চরে অনেক ময়লা আবর্জনা। তার মধ্যেই আমাদের খেলতে হয়, অনেক সময় বল নদীর পানিতে পরে অনেক দূরে চলে যায়।
ফুটবল খেলতে আসা মো. জাহাঙ্গীর বলে, বান্দরবানে প্রতিবছর ক্রীড়া উন্নয়নের জন্য প্রচুর টাকা ব্যয় হয় কিন্তু এলাকাভিত্তিক নতুন নতুন মাঠ সৃষ্টি না হওয়ায় নতুন প্রজন্মের অনেকেই বিপথে চলে যাচ্ছে।
এদিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অংশ নেওয়া জেলার ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকরা বলছেন, বান্দরবানের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে এবং শিশু-কিশোর ও যুবকদের মাদক ও মোবাইলের আসক্তি থেকে দূরে রাখতে নিয়মিত মাঠে অনুশীলনের ব্যবস্থা করতে হবে। মাঠের সংকট দূর করার পাশাপাশি নিয়মিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে।
বান্দরবান জেলা ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক মো. শহীদুর রহমান সোহেল বলেন, বান্দরবানের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে প্রশাসনের আরও কাজ করতে হবে। ক্রীড়া উন্নয়নে নিয়মিত খেলার আয়োজন, মাঠ সংকট দূর করে এলাকাভিত্তিক যোগ্য খেলোয়াড়দের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে ক্রীড়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে নতুবা তারা মোবাইল আসক্তিসহ নানান অপকর্মে তাদের জীবন শেষ করবে।
বান্দরবান জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সদস্য অং চ মং মারমা বলেন, ক্রীড়ার উন্নয়ন সবাই চায়, আর আমাদের সবাইকে ক্রীড়ার উন্নয়নে আরও নিবেদিত হতে হবে।
এদিকে ক্রীড়া কর্মকর্তারা বলছে মাঠ তৈরি ও ক্রীড়াবিদদের উন্নয়নে ক্রীড়া সংস্থা নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। বান্দরবান জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, শিশু-কিশোর ও যুবকদের মাদক ও মোবাইলের আসক্তি থেকে দূরে রাখা এবং আগামীর ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুরক্ষিত ও স্বাস্থ্যবান রাখার জন্য বান্দরবান জেলা ক্রীড়া সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মিনি স্টেডিয়ামের কাজ চলছে আর আমরা আগামী অর্থবছরে যাতে বান্দরবানে একটি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে পারি তার জন্য তদারকি করছি।
তিনি বলেন, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় আমরা বান্দরবানে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ করছি এবং এখানে যারা ভালো করছে তাদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিকেএসপিতে পাঠিয়ে থাকি।
আরএ