ঢাকা, শনিবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

প্রবাসে বাংলাদেশ

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপ প্রবেশ, এবারও শীর্ষে বাংলাদেশ

সাগর আনোয়ার, জার্মানি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:০৭, অক্টোবর ১১, ২০২৫
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপ প্রবেশ, এবারও শীর্ষে বাংলাদেশ ভূমধ্যসাগরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকা

ইউরোপে অবৈধপথে অভিবাসন সামগ্রিকভাবে ২২ শতাংশ কমলেও, মধ্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশে শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিকরা। শুধুমাত্র এ পথ দিয়ে সেপ্টেম্বরেই ইউরোপে প্রবেশ করেছেন ৮ হাজার ৪৬ জন।

আর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রবেশ করেছেন ৫০ হাজার ৮৫০ জন, যা গত বছরের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) ইউরোপীয় সীমান্ত ও উপকূলরক্ষী সংস্থা ফ্রনটেক্সের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
সংস্থাটির জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধিত ব্যক্তিদের তথ্যে অবৈধ পথে ইউরোপ প্রবেশে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন মিসরীয় নাগরিকরা। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন আফগান নাগরিকরা।

ফ্রনটেক্সের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ জন। ফ্রনটেক্স জানিয়েছে, বর্তমানে ইউরোপজুড়ে সংস্থাটির ৩ হাজার ৬০০ জনের বেশি কর্মকর্তা সীমান্ত এলাকায় অভিবাসী নজরদারিতে নিয়োজিত রয়েছেন। সংস্থাটির মতে, কঠোর নজরদারি ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করায় এ বছর অনিয়মিত অবৈধ অনুপ্রবেশ ইউরোপে কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম আফ্রিকান রুট দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ ৫৮ শতাংশ, পশ্চিম বলকান রুট দিয়ে অবৈধ প্রবেশ ৪৭ শতাংশ আর পূর্ব ইউরোপের স্থলসীমান্ত দিয়ে অবৈধ প্রবেশ ৩৬ শতাংশ কমেছে। তবে মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় সাগরপথে এখনও সবচেয়ে বেশি অভিবাসী ইতালিতে প্রবেশ করে। পুরো ইউরোপে মোট অবৈধ প্রবেশকারীদের প্রায় ৪০ শতাংশই এই রুট দিয়ে প্রবেশ করেছে।

সংস্থাটি আরও জানায়, সকল অবৈধপথে ইউরোপে প্রবেশ হ্রাস পেলেও পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় রুটে অনিয়মিত প্রবেশ বেড়েছে ২৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে এ রুটে ইউরোপে প্রবেশ বেড়েছে অর্ধেকেরও বেশি, যার মধ্যে আলজেরিয়া থেকে যাত্রা করা অভিবাসীই প্রায় তিন-চতুর্থাংশ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে সোমালিয়া ও মরক্কোর নাগরিকরা।

বাংলাদেশিদের উল্লেখযোগ্য অবস্থান

ফ্রনটেক্স জানিয়েছে, এ বছর অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশকারীদের মধ্যে বাংলাদেশি, মিসরীয় ও আফগান নাগরিকরাই সবচেয়ে বেশি। শুধু মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় সাগরপথে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার ৯০০ জনের আগমন শনাক্ত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি। যদিও এই সংখ্যা গত বছরের সমান, তবে লিবিয়া থেকে যাত্রা করা নৌকা ও ট্রলারে এ বছর ৫০ শতাংশ বেশি মানুষ ইউরোপে প্রবেশ করেছে, যা ইতোমধ্যে ২০২৪ সালের তুলনায় বেশি।

ফ্রনটেক্স প্রতিবেদনে আরও জানায়, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় রুট দিয়ে ইউরোপে অবৈধ প্রবেশ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২ শতাংশ কমেছে। যার সংখ্যা ৩৭ হাজার ২০০ জন। অন্যদিকে, পশ্চিম আফ্রিকান রুট দিয়ে অবৈধ প্রবেশ কমেছে সবচেয়ে বেশি ৫৮ শতাংশ। এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১২ হাজার ৮৭৯ জন ইউরোপে পৌঁছেছে।

মানবিক সংকট এখনও গভীর

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে কমপক্ষে ১ হাজার ২৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংস্থাটির মতে, অবৈধপথে ইউরোপ প্রবেশের সংখ্যা কিছুটা কমলেও মানবিক সংকট এখনও গভীর। মৃত্যুর সংখ্যা প্রমাণ করে, সহজে ইউরোপ প্রবেশের জন্য মানুষ এখনও জীবনের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করছে না।

যুক্তরাজ্যের দিকে প্রবাহ বেড়েছে

ফ্রনটেক্সের মতে, ফ্রান্স হয়ে ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে যুক্তরাজ্যের দিকে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৩০০ জন নাগরিক যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো এবং আফ্রিকার কিছু দেশের কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের ফলে নৌপথে ও বলকান সীমান্ত দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের হার কমেছে। তবে পাচারকারীরা আরও নিত্যনতুন কৌশল নিচ্ছে। এতে জীবনের ঝুঁকি কমার বদলে বরং বেড়েছে।

এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

প্রবাসে বাংলাদেশ এর সর্বশেষ