সামনেই কোরবানির ঈদ। ফ্রান্সে বসবাসরত মুসলিমদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
গত মঙ্গলবার (২৭ মে) পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে সৌদি আরবে। তাই ৬ জুনকে কোরবানির ঈদের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ফ্রান্সেও কোরবানির ঈদ হবে ৬ জুন।
জানা যায়, ফ্রান্সে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় নয় মিলিয়ন, যা ইউরোপের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠী। প্রতিবছরের মতো এবারও প্যারিস, মার্সেই, লিওঁসহ বিভিন্ন শহরের মসজিদ ও ঈদগাহে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়, বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে।
এদিকে পশু কোরবানি করতে হলে নির্দিষ্ট লাইসেন্সপ্রাপ্ত কসাইখানায় যেতে হয়। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আগেই সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে, যেন স্বাস্থ্য ও পরিবেশবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করা যায়। পশু কল্যাণ আইন অনুযায়ী, কোনো পশুকে অপ্রয়োজনীয় কষ্ট না দিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জবাই করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ফ্রান্সের ‘ইল-দো-ফ্রান্স’ অঞ্চলে কোরবানির পশু জবাই শুধু সরকার অনুমোদিত স্লটারহাউস বা অস্থায়ীভাবে অনুমোদিত স্থানে করা যায়। অন্য কোথাও পশু জবাই করা আইনত নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এসব স্লটারহাউসে পশু জবাই করার জন্য আগে বুকিং থাকা আবশ্যক। এখানে লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্লটারহাউসের সংখ্যা কম হওয়ায় ঈদের দিন থেকে তিন দিন ধরে মাংস বিতরণ চলতে থাকে। যারা আগে বুকিং দেন, তারাই কোরবানির দিনে মাংস পেতে পারেন। অন্যথায় ঈদের পরদিন বা তার পরদিন মাংস হাতে পান। সেক্ষেত্রে ঈদের দিন আগে কেনা মাংস খাওয়া গেলেও কোরবানির মাংস কপালে জোটে না।
তারপরও রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে বাংলাদেশের মতো হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কেনার ঝক্কি না থাকায় স্বস্তিই বোধ করেন ফ্রান্সের বাংলাদেশি প্রবাসীরা।
এক ফ্রান্সপ্রবাসী বলেন, বলা যায়, সুখেই আছি। বুকিং দিতে দেরি হলে মাংস হাতে পেতে দেরি হলেও গরু/ছাগল কেনার ঝামেলা নেই, কাটাকুটির ঝামেলা নেই। শুধু বুকিং দিয়ে টাকাটা দিলেই হয়। ওরাই সব কিছু কেটে-কুটে মেপে রেখে দেয়। গিয়ে শুধু নিয়ে এলেই হলো।
বাড়িতে বা অনুমোদিত স্লটারহাউস ছাড়া অন্য কোথাও পশু জবাই করা আইনত নিষিদ্ধ। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১৫,০০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। পশুর কল্যাণ এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সরকার এই নিয়মাবলি কঠোরভাবে প্রয়োগ করে।
এদিকে ২০২৪ সাল থেকে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ‘ইল-দো-ফ্রান্স’ অঞ্চলে ১৮টি স্লটারহাউসে সরকার অনুমোদন দিয়েছিল।
এছাড়া, পশু কোরবানিকে আরও সহজ করার জন্য রয়েছে হালাল মার্কেট। প্যারিসবাসীর কাছে এটি ‘আশ (এইচ) মার্কেট’ নামে বেশি পরিচিত। কয়েকটি খামার আছে, যেগুলো শহর থেকে দূরে অবস্থিত। কিছু বাংলাদেশি দোকানও আছে, যারা অগ্রিম বুকিংয়ের ভিত্তিতে কোরবানির আয়োজন করে থাকে।
এভাবেই পশু কোরবানি হয় ফ্রান্সে।
এসআই