ঢাকা: সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির ঢাকা সফরকে স্বাগত জানিয়েছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি।
সোমবার (১৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সফররত প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে জুয়ো ইয়াস হু বিষয়টি জানান।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার জুয়ো ইয়াস হু ৭ সদস্যের এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
জুয়ো বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক শুধু দু’টি দেশের স্বার্থই রক্ষা করে না, গোটা অঞ্চলের স্বার্থও রক্ষা করে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে আমরা আনন্দিত। এই দুই দেশের সম্পর্কের মধ্য দিয়ে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সর্ম্পক এগিয়ে যাবে।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি। এ অঞ্চলে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখন অনেক ভালো।
মাঝখানে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছিল, এখন সে সমস্যা আর নেই। এখন চীন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু্। আমরা সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। একটি অবকাঠামো ব্যাংক হচ্ছে। বাংলাদেশ এর অংশীদার বলেও জানান তিনি।
সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, আমরা পার্টি টু পার্টি’র (আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি) মধ্যেও সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাই। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক পুরনো। এই সম্পর্ক শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। তখন মাওলানা ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের দায়িত্বে থাকাকালে চীন সফরে গিয়েছিলেন।
আশরাফ বলেন, চীনের সঙ্গে এই সম্পর্ক আমরা শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, সব ক্ষেত্রেই প্রসারিত করতে চাই। ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, চীনের সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের অনেক সংস্কৃতির মিল রয়েছে। চীনের গ্রামে গেলে আমাদের দেশের ঢেঁকি, লাঙল, পালকি দেখা যাবে।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে আরও ছিলেন- দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী ও ব্যারিস্টার বিপ্লব কুমার বড়ুয়া প্রমুখ।
এ বৈঠকের পর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের একই স্থানে আরেকটি বৈঠক হয়। এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে নেতৃত্বে দেন দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান।
বৈঠকে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এ জন্য চীনের ভিসা প্রক্রিয়া আরও সহজ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ব্যবসায়ী, যুব সমাজ, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যোগাযোগ বাড়নোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্ব ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের আরও আসা-যাওয়া কথা বলা হয়।
বৈঠক শেষে ফারুক খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা চাই দুই দেশের ব্যবসায়ী টু ব্যবসায়ী সম্পর্ক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সব স্তরের মানুষের সঙ্গে সব স্তরের মানুষের সম্পর্ক। আমরা বলেছি শুধু আমাদের শীর্ষ স্থানীয় নেতারাই যাবে না, আমাদের মধ্য স্তরের নেতারাও চীন যাবেন। এ জন্য বাংলা থেকে সরাসরি চীনের ভাষায় অনুবাদের ব্যবস্থা করার কথাও আমারা তাদের বলেছি।
এর আগে, সোমবার সকাল ১০টায় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
শ্রদ্ধা জানানো শেষে বঙ্গবন্ধু ভবনে যান তারা। সেখানে তারা বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারি ঘুরে দেখেন।
** চীনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সৈয়দ আশরাফের বৈঠক
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৫
এসকে/এসএস/পিসি