ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ কার্তিক ১৪৩২, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৭

রাজনীতি

জাতীয় নির্বাচন বিলম্ব হলে দেশের জনগণ সহ্য করবে না: শামসুজ্জামান দুদু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৫৪, অক্টোবর ১৬, ২০২৫
জাতীয় নির্বাচন বিলম্ব হলে দেশের জনগণ সহ্য করবে না: শামসুজ্জামান দুদু সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো অবস্থাতেই ফেব্রুয়ারি মাস অতিক্রম করা যাবে না। দেশের জনগণ কোনো ধরনের বিলম্ব বা ভিন্নতা মেনে নেবে না।

কোনো ধরনের টালবাহানা বা বিলম্ব সহ্য করবে না।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ পিপলস ফোরামের উদ্যোগে অনির্বাচিত সরকার নয়, নির্বাচিত সরকারের দাবিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এ সরকার ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। তাদের আমি সমালোচনা করতে চাই না। তবে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এর মানে হলো, মানুষ গণতন্ত্র চায়। স্বৈরাচারের পতন গণতন্ত্রের প্রত্যাশায় ঘটেছে। এ সাধারণ ও মৌলিক বিষয়টি যদি এ সরকার উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশ, গণতন্ত্র এবং সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান তিনটিরই বড় ক্ষতি হবে। সেই কারণেই আমি সরকারকে বলতে চাই, দেশের মানুষ অনেক আগেই একটি সাধারণ নির্বাচনের প্রত্যাশা করেছে। কারণ, এ ধরনের দৃষ্টান্ত আমাদের দেশেই রয়েছে। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ নির্বাচন পরিচালনা করে জাতিকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে নিয়ে গিয়েছিলেন। এটি প্রমাণ করে, এমন পদক্ষেপ নেওয়া সম্পূর্ণ সম্ভব।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকার নয়, যত দ্রুত সম্ভব একটি নির্বাচিত সরকার গঠন করতে হবে। যদি মনে হয় ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব, তাহলে সেটিও বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই ফেব্রুয়ারি মাস অতিক্রম করা যাবে না।

তিনি বলেন, ইরানের শাহ যখন গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতিত হয়েছিলেন, তিনি ছিলেন আমেরিকার ঘনিষ্ঠ ও সমর্থিত ব্যক্তি। তবুও তিনি আমেরিকায় প্রবেশাধিকার পাননি। পরে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের পর তার আশ্রয় মিলেছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। ভারত একজন অভিযুক্ত হত্যাকারীকে, গণতন্ত্র ধ্বংসকারীকেও, লুটপাটকারী সরকার প্রধানকেও আশ্রয় দিয়েছে। এ অভিযোগ বাংলাদেশের মানুষ তুললে ভারত এ বিষয়ে কী জবাব দেবে, তা আমার জানা নেই।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে বহু উত্থান-পতন ঘটেছে, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু গণতন্ত্রের প্রশ্নে বাংলাদেশের জনগণ কখনো আপস করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। তাই এ সরকারকে বুঝতে হবে বেশি সময় নেওয়া ঠিক হবে না।

এ সরকার ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের কথা বলেছে। তারপরও মানুষের মনে এক ধরনের জিজ্ঞাসা রয়ে গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে সত্যিই কি নির্বাচন হবে? এ প্রশ্নের জন্ম হয়েছে সরকারের চলন-বলন, আচরণ ও বক্তব্যের কারণেই। সম্ভবত গতকালও ড. মোহাম্মদ ইউনূস সাহেব বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সরকারকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, সরকারকে হতে হবে আরও সচল ও সক্রিয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করার জন্য বিভিন্ন মহল ও বিভিন্ন দেশ নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। কখনো তারা রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, কখনো নানা উপায়ে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে। এগুলো অত্যন্ত ভয়ঙ্কর প্রবণতা। যারা এসব করছেন, তারা মুখে ভালো কথা বললেও, বাস্তবে তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন।

তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূসকে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছে, কারণ স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সেতু হিসেবে এ সরকারকে তারা গ্রহণ করেছে। তাই আমাদেরও সমর্থন আছে এবং অন্যান্য সব রাজনৈতিক দলেরও সমর্থন রয়েছে। তবে আগামী দিনে যদি কেউ ষড়যন্ত্র করে এ সরকারকে পতনের মুখে ঠেলে দিতে চায়, তাহলে সে ষড়যন্ত্রের অগ্রভাগে থাকবে পতিত আওয়ামী লীগ। এ আওয়ামী লীগ এখনও বুঝে না। তারা গণহত্যা করেছেন, যেমন শেখ মুজিবও বাংলাদেশে গণহত্যা করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে প্রায় ৪০ হাজার  বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল। বোধ হয় কন্যা তার পিতার সেই পথই অনুসরণ করেছেন।

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মাইন উদ্দিন মজুমদারের সভাপতিত্বে সভায় আর বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব আহসান হাবীব লিংকন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক সম্পাদক পরিষদের সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, ডেমোক্রেটিক লীগ এর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মাহবুব আলম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান, ডিলের সাধারণ সম্পাদক খোকন চন্দ্র দাস, মনোয়ার হোসেন বেগ, ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম বিবি মাসুম, কৃষক দল নেতা মো. শাহিন মোল্লা প্রমুখ।

ডিএইচবি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি এর সর্বশেষ