দলের ভাবমূর্তি নষ্ট ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে বিএনপি। শৃঙ্খলা রক্ষায় জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে দলটি।
মঙ্গলবার বিকালে পিরোজপুর সদর উপজেলার সাত ইউনিয়নের ৪৯৭ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৪৮২ জন ভোট দেন। এরপর শুরু হয় ভোট গণনা। গণনার একপর্যায়ে কিছু ব্যক্তি হট্টগোল শুরু করেন এবং তা দ্রুত অডিটোরিয়ামের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে কয়েক ব্যক্তি ভোট দেওয়া ব্যালট ছিনতাই করে নিয়ে যান। ফলে ভোট গণনা বন্ধ হয়ে যায় এবং ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করা হয়।
অন্যদিকে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে ওয়ার্ড কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে দফায় দফায় জেলা বিএনপিসহ বিভাগীয় পর্যায়ে অভিযোগ দিয়েছেন ওই ইউনিয়নের একাংশের নেতা-কর্মীরা।
অভিযোগে জানা যায়, ভরতখালী ইউনিয়নের ওয়ার্ড কমিটিতে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ত্যাগী নেতাদের নাম অন্তর্ভুক্ত না করে আওয়ামী ও বিএনপিবিরোধী লোকজনের নাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; যা সংগঠনের নিয়মনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। তালিকায় নাম না থাকায় বিএনপির পুরোনো, ত্যাগী অনেক নেতা হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যারা ফ্যাসিস্ট আমলে কঠোরভাবে বিএনপিবিরোধী ছিলেন, তারাই আজ বিএনপির বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে ও গুরুত্বপূর্ণ তালিকায় স্থান ও সম্মান পাচ্ছেন; যা ত্যাগী নেতাদের জন্য অসম্মান বয়ে আনে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সুকৌশলে আওয়ামী স্বৈরাচারদের পুনর্বাসনের জন্য গোপনে রাতের আঁধারে ইউনিয়ন ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে সুকৌশলে আওয়ামী লীগের পদপদবিধারীদের ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়েছে। ভরতখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ একাধিক নেতা-কর্মী জানান, কমিটিতে আওয়ামী ও বিএনপি বিরোধী লোকজন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ বিতর্কিত কমিটি নিয়ে আগামীকালের সম্ভাব্য কাউন্সিল স্থগিতের দাবি জানান নেতা-কর্মীরা। শুধু জেলা, মহানগর আর তৃণমূল নয়, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতারাও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে নেওয়া ব্যবস্থা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। অতিসম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের সব ধরনের সদস্যপদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিরূপ মন্তব্য করায় সব ধরনের পদপদবি থেকে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাথী উদয় কুশল বড়ুয়াকে বহিষ্কার করা হয়।
কিছুদিন আগে টঙ্গীর বিভিন্ন শিল্পকারখানায় দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিব উদ্দিন সরকার (পাপ্পু), মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আবদুল হালিম মোল্লা, মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য জিয়াউল হাসান (স্বপন) ও টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে বিল পরিশোধ কেন্দ্র করে মহাখালীতে একটি বার ভাঙচুর ও কর্মচারীদের মারধর করার ঘটনায় বনানী থানা যুবদলের আহ্বায়ক মনির হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়। জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নেওয়া হচ্ছে সাংগঠনিক শাস্তির ব্যবস্থা। ছাড় দেওয়া হচ্ছে না কাউকেই। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও কাউকে না কাউকে বহিষ্কার করা হচ্ছে।
বিএনপির মুখপাত্র, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি করলে তাকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়া হচ্ছে। পরে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ’ এ বিষয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, ‘দলের ভিতর কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা হবে না। ত্যাগী নেতা-কর্মীই দলের মূলশক্তি। দীর্ঘদিনের একজন কর্মীকে তো সহজেই কেউ দল থেকে বহিষ্কার বা সদস্যপদ স্থগিত করতে চায় না। যখন একজন নেতা বা কর্মীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ প্রদান করা হয়, তখন সবকিছু দেখে-শুনে এবং জেনে-বুঝে যৌক্তিকভাবেই সেটা দেওয়া হয়; যা অন্যদের জন্য একটা সতর্ক সংকেত। এতে আশা করি অন্যরা সাবধান হবেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। ’ এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহসম্পাদক এইচ এম সাইফ আলী খান বলেন, ‘দলের ভাবমূর্তি নষ্ট ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে বিএনপি। সবচেয়ে বেশি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে আমাদের দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর শাখা। কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। ’