ঢাকা, রবিবার, ৮ ভাদ্র ১৪৩২, ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

রাজনীতি

জুলাই সনদ শহীদদের রক্তের পবিত্র দলিল, প্রয়োজন সাংবিধানিক রূপায়ণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:৪১, আগস্ট ২৩, ২০২৫
জুলাই সনদ শহীদদের রক্তের পবিত্র দলিল, প্রয়োজন সাংবিধানিক রূপায়ণ

জুলাই জাতীয় সনদ শহীদদের রক্তস্নাত। এটিকে পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে নেওয়া হয়েছে।

দেশের মৌলিক সংস্কারের জন্য জীবন দিয়েছে। এর ফলে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও আইনগত ভিত্তি দরকার।

‎শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে ‘জুলাই সনদ: আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবায়ন’ বিষয়ক এক বিশেষ গোলটেবিল বৈঠকে এই দাবি করেন বক্তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই বৈঠকের আয়োজন করে।

দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ, সাংবিধানিক সংস্কার এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে এই আলোচনা করেন রাজনীতিবিদ ও চিন্তাবিদরা। সভায় বক্তারা রাজনৈতিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন, সংবিধান পুনর্লিখন এবং জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা মত দেন, শুধুমাত্র ক্ষমতা বদল নয়, বরং একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য কাঠামোগত সংস্কার অপরিহার্য।

নতুন রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠা, গণপরিষদ নির্বাচনের ওপর জোর দিয়ে আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল উদ্দেশ্য ছিল জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠা করা।  

তিনি বলেন, অভ্যুত্থান বা বিপ্লবের বিতর্কে জড়িয়ে আমরা জনগণের অবদানকে বাতিল করে দিচ্ছি। সাকিব আনোয়ার নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের ওপর জোর দেন, তবে বিদ্যমান সংবিধানের কিছু অংশে আলোচনার মাধ্যমে পরিবর্তন আনা সম্ভব বলেও মনে করেন।  

৫ আগস্টের পর কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করে আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন, গত জুলাই মাসে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, তা কোনো দলীয় আন্দোলন ছিল না, বরং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছিল। তার মতে, এই গণঅভ্যুত্থান ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের পরিবেশ তৈরি করেছিল। তবে, তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ৫ আগস্টের পর কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে।  

মাহদী আমিন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, ভিশন ২০৩০ এবং বিএনপির ২৭ ও ৩১ দফার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই দলিলগুলোই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারের মূল ভিত্তি।   

ভিন্নমতকে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হিসেবে আখ্যায়িত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এই উপদেষ্টা বলেন, সকল দলের অভিন্ন নীতি ও লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও পদ্ধতিগত ভিন্নতা থাকতেই পারে।

জুলাইয়ের বিপ্লব সফল, এখন প্রয়োজন মৌলিক ব্যবস্থার পরিবর্তন এমন মন্তব্য করে আলোচনা সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাইয়ের ঘটনা একটি সফল বিপ্লব। এটি পুরনো ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে একটি নতুন ধারার সূচনা করেছে। যে পদ্ধতি শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচারী করে তুলেছিল, সেই পদ্ধতি পরিবর্তন না করলে নতুন গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।  

তিনি জুলাই জাতীয় সনদকে শহীদদের রক্তস্নাত দলিল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জুলাই সনদ শহীদদের রক্তের পবিত্র দলিল, এখন প্রয়োজন সাংবিধানিক রূপায়ণ। এবং এর বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।  

‘সার্বভৌম সংসদ’ নয়, গণপরিষদই পারে সাংবিধানিক সংকট মেটাতে এমন মন্তব্য করে আলোচনা সভায় চিন্তক ও রাজনীতিবিদ সারোয়ার তুষার বলেন, ১৯৭৫ সালের বাকশালের মাধ্যমে সংশোধনী, ২০০৪-২০০৫ সালের চতুর্দশ সংশোধনী এবং পঞ্চদশ সংশোধনী- এই তিনটি সংশোধনীই ক্ষমতাসীন দলের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে হয়েছে, যার ফলে দেশের মৌলিক কাঠামোর অপব্যবহার হয়েছে।  

তিনি বলেন, সংবিধান কেবল সংশোধন করা যায় যদি তা মূল কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচন এক জিনিস নয়। যখন বড় ধরনের সাংবিধানিক পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, তখন গণপরিষদ নির্বাচন অপরিহার্য।

আলোচনায় এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বর্তমান সংবিধানের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী একই সাথে সব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন, যা স্বৈরাচারী শাসনের জন্ম দেয়। রাষ্ট্রপতি কার্যত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের অধীন। দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন-সহ অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন, ফলে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না।  

জাবেদ রাসিন এসব সমস্যা সমাধানে একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নিয়োগ কমিশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন এবং জুলাই সনদের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য একটি নতুন সংবিধানের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন জরুরি, যা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে।

আলোচনা সভায় ‎ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন করতে চায় সরকার। কিন্তু এক বছর হয়ে যাওয়ার পরও এখন জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। এমনকি জুলাই সনদ নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ সময় শহীদ পরিবারের সদস্য সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, লেখন ও অ্যাক্টিভিস্টরা বক্তব্য দেন।

ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি এর সর্বশেষ