বরিশালের আগৈলঝাড়ায় শ্বশুরকে অপহরণ করে হত্যা এবং লাশ গুমের ঘটনায় জামাই কৃষ্ণ বাড়ৈকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত অখিল হালদার মন্টুর লাশ উদ্ধার করে শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত অখিল হালদার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামের বাসিন্দা ও পেশায় একজন দুধ ব্যবসায়ী। নিহতের মেয়ে জামাই কৃষ্ণ বাড়ৈ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাকাই গ্রামের কানাই বাড়ৈর ছেলে।
নিহতের স্বজনরা জানান, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে দুই বছর আগে বাবা-মায়ের অমতে কৃষ্ণ বাড়ৈকে বিয়ে করেন নিহত অখিল হালদার মন্টুর মেয়ে আঁখি হালদার। প্রথমে আঁখির পরিবার প্রেমের ওই বিয়ে মেনে নেয়নি। পরবর্তীতে বিয়ে মেনে নিলেও কিছুদিন পর থেকে টাকার জন্য আঁখিকে মারধর করতো স্বামী কৃষ্ণ বাড়ৈ। বিষয়টি পারিবারিকভাবে কয়েকবার সমাধান করা হলেও কৃষ্ণের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
সম্প্রতি কৃষ্ণকে বিদেশ পাঠানোর জন্য তার বাবা কানাই বাড়ৈ ১ লাখ টাকা ছেলের শ্বশুর অখিল হালদারকে দেন। পরে বিদেশ না যাওয়ায় ৬০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে বাকি টাকা দিয়ে কৃষ্ণকে ভ্যান কিনে দেওয়ার কথা হয়। যা নিয়ে পরবর্তীতে শ্বশুর ও জামাইয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটি হলে বাকি টাকাও ফেরত দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার (২০ আগস্ট) সকালে ভ্যান গাড়ি কেনার জন্য জামাই-শ্বশুর একত্রে বাড়ি থেকে বের হন।
তবে স্থানীয়রা জানান, অখিল হালদার মন্টু বুধবার দুপুরে দুধ বিক্রি করতে গৈলা বাজারে যান। দুধ বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে আগৈলঝাড়ার রাজিহার বাজারের ওয়াপদা সড়কে আসলে শ্বশুর মন্টুকে অপহরণ করে নিয়ে যায় জামাই কৃষ্ণ বাড়ৈ। ২০ আগস্ট বাড়িতে না ফেরায় পরের দিন ২১ আগস্ট মন্টুর স্ত্রী বিউটি হালদার আগৈলঝাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. অলিউল ইসলাম জানান, সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে প্রাথমিক তদন্তে নামে পুলিশ। আর তদন্তের শুরুতেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ তথ্য-প্রযুক্তির বিভিন্ন আলামতে নিখোঁজ ব্যবসায়ীর মেয়ে জামাতা কৃষ্ণ বাড়ৈকে সন্দেহ হয় পুলিশের।
পরে ২২ আগস্ট তাকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে শ্বশুর মন্টুকে শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনা সামনে আসে। সেইসঙ্গে আটক কৃষ্ণ বাড়ৈই হত্যার পুরো ঘটনা বর্ণনা শেষে যেখানে লাশ গুম করেছে সেখানে নিয়ে যায় এবং তার দেখানো জায়গা রাজিহার ইউনিয়নের আহুতি বাটরা গ্রামের সড়কের পাশে খালের কচুরিপানার নিচ থেকে শুক্রবার দিবাগত রাতে মন্টুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
ওসি বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। যে মামলায় নিহতের মেয়ে জামাতা কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে শ্বশুরকে হত্যার পর তার ভ্যান ও ৫টি দুধের কলস নিয়ে জামাই কৃষ্ণ বাড়ৈ মাদারীপুর সদরে গিয়ে বিক্রি করে দেন। যা উদ্ধারেও চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহতের স্ত্রী বিউটি হালদার বলেন, আমার স্বামীর অমতে প্রায় দুই বছর পূর্বে মেয়ে আঁখি হালদার কৃষ্ণ বাড়ৈকে বিয়ে করায় প্রথম থেকেই অশান্তি শুরু হয়। বিভিন্ন কারণে জামাই আমাদের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। যার সূত্র ধরেই তাকে অপহরণ করে হত্যা করেছে।
এদিকে অভিযুক্ত জামাই কৃষ্ণ জানান, শ্বশুরের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ক্ষোভের কারণেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় শ্বশুর অখিলকে।
অপরদিকে পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করা অভিযুক্ত কৃষ্ণের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবার-পরিজন। এমনকি ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন অভিযুক্ত কৃষ্ণের স্ত্রী আঁখিও।
এলাকাবাসী জানান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে গাভীর দুধ সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে পাইকারি দিতেন নিহত অখিল হালদার। কারো সাথে কখনো কোনো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়নি তার। তবে জামাই মাদকাসক্ত হওয়ায় প্রায় সময়ই খারাপ আচরণ করতো শ্বশুর-শাশুড়ির উপর। এরই ধারাবাহিকতায় এই হত্যাকাণ্ড।
এমএস/এমইউএম