ঢাকা, রবিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ জুলাই ২০২৫, ০১ সফর ১৪৪৭

রাজনীতি

নতুন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত প্রয়োজন: সাকি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:২৩, জুলাই ২৭, ২০২৫
নতুন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত প্রয়োজন: সাকি টাঙ্গাইল শহীদ মিনারে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত জুলাই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য জোনায়েদ সাকি

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, শহীদের দেওয়া প্রাণকে যদি আমরা মর্যাদা দিতে চাই, নিজেদের ভবিষ্যৎকে তৈরি করতে চাই, তবে আমাদের নতুন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে হবে।

তিনি বলেন, লুটপাট, দুর্নীতি আর দখলদারির অর্থনীতিকে বহাল রেখে এবং বিভাজনের সংস্কৃতি বজায় রেখে বাংলাদেশে আমরা কোনো নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারব না।

রোববার (২৭ জুলাই) বিকেলে টাঙ্গাইল শহীদ মিনারে গণসংহতি আন্দোলন টাঙ্গাইল জেলার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জুলাই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

এর আগে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও মাজার জেয়ারত করেন গণসংহতি আন্দোলনেরা কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতারা।

সমাবেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, লুটপাট, দুর্নীতি আর দখলদারির অর্থনীতিকে বহাল রেখে এবং বিভাজনের সংস্কৃতি বজায় রেখে বাংলাদেশে আমরা কোনো নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারব না। এই অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত বদলাতে হবে। তার ওপর দাঁড়াবে নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। গণতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ছাড়া গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত টিকতে পারবে না। এর জন্য গণমানুষের রাজনৈতিক দল দরকার, যারা গণমানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে। শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি, কর্মচারী, ছাত্র-তরুণ সকলের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে, এমন জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তিকে আমাদের গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এই ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে যারা রক্ত দিয়েছেন তারা জনগণের বাংলাদেশের দিকে আমাদের নতুন যাত্রার দিশারী। আজকে শহীদের মায়েদের এখানে বলতে হচ্ছে, আমাদের শহীদদের হত্যার এখনও বিচার হয়নি। শহীদরা এখনও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাননি। আমাদের আহতরা এখনও সম্পূর্ণ চিকিৎসা পায়নি। শহীদদের পরিবারের ও আহতদের জীবনের দায়িত্ব নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা পরিষ্কার করে বলি, আপনারা অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। এইগুলো আপনাদের প্রথম দায়িত্ব ছিল। এই রাষ্ট্র নতুন পথে চলবে কিনা এটা ছিল তারই নমুনা, তারই স্বীকৃতি। মানুষের স্বপ্ন, ইচ্ছা আর অভিপ্রায় অনুযায়ী এই দেশ চলবে কি না, সেটা প্রমাণিত হবে যখন শহীদেরা এই দেশে মর্যাদা পাবে। সরকারের উচিৎ ছিল, প্রতিটি জেলায় এসে শহীদ পরিবারকে নিয়ে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা, জনগণের যে ইচ্ছা ও স্বপ্ন অভ্যুত্থানে তৈরি হয়েছে তাকে ধারণ করা ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ কায়েমের ইতিহাস তুলে ধরে জোনায়েদ সাকি বলেন, আওয়ামী লীগ যখন পঞ্চদশ সংশোধনী করল, তখনই পরিষ্কার বোঝা গেছে, তারা একটা ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করতে চায়। নিজেদের শাসনকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করার জন্য তাদের বাসনাকে সহায়তা করেছে আমাদের দেশের সাংবিধানিক স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতাকাঠামো। এই কথা আমরা গণসংহতি আন্দোলনের জন্মলগ্ন থেকে বলে আসছি। বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দল ও নেতা তখন পর্যন্ত এটা মানতে নারাজ ছিলেন। তারা ভেবেছেন, আমাদের এই সংবিধান হলো মহৎ সংবিধান। আমরা বলেছি, এই সংবিধান মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর দাঁড়িয়ে হয়েছে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা, তার জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা—সেই আকাঙ্ক্ষা সংবিধানে প্রতিফলিত হয়নি। সেকারণে সমস্ত ক্ষমতা একজন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে। যিনি প্রধানমন্ত্রী হন তার হাতে সব ক্ষমতা, তিনিই পুরো রাষ্ট্রটা পকেটে ঢুকিয়ে স্টিমরোলার চালিয়েছেন। এটাই ১৯৭২ সাল থেকে এদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা।

সমাবেশে শহীদ মারুফ মিয়ার মা মোর্শেদা বেগম বলেন, এক বছর হয়ে গেছে। এখনো বিচার পাই নাই। যারা উপদেষ্টা হয়েছে, তাদের ভাবা উচিত, যাদের রক্তের বিনিময়ে তারা উপদেষ্টা হয়েছেন, সেই শহীদেরা কী পেল? দেশের এই অবস্থা কেন? দেশ থেকে আমরা কী পেলাম? আমাদের ছেলেরা মায়ের বুক খালি করে কি অন্যায় করেছে?

তিনি আরও বলেন, জনগণকে বলি, আমার সন্তান ন্যায়ের জন্য জীবন দিয়েছে। আমরা জানি কী কষ্ট। আপনাদের বলি, অন্যায় না করে শুধরান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান।

আহত জুলাই যোদ্ধা ফাতেমা খানম বলেন, আমরা এক জুলাই থেকে আরেক জুলাইয়ে চলে এসেছি কিন্তু একটা হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখি নাই। সেই সব উপদেষ্টা ক্ষমতাবানদের বলছি, যারা আমার শহীদ ভাই-বোনদের রক্তের উপরে দাঁড়িয়ে যারা ক্ষমতা নিয়েছেন, তাদের প্রশ্ন করছি, কেন বিচার হয়নি? বিচার করতে না পারলে কেন আমাদের ভাই-বোনদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন, সেই প্রশ্নের উত্তর দিন।

আহত জুলাই যোদ্ধা আকাশ রহমান বলেন, জুলাইয়ে আমার চোখে গুলি লেগেছে, এখনো ভালো হয়নি। হয়তো সমগ্র জীবনের জন্য অন্ধ হয়ে যেতে পারি। আমরা জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছি। আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশ চাই।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের টাঙ্গাইল জেলার সভাপতি ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ফাতেমা রহমান বিথী বলেন, আমরা আমাদের কৃষক, শ্রমিক, ভ্যানচালক, অটোচালক, চা-ওয়ালা, রিকশাচালক, জেলে তাদের একটা ভালো পরিস্থিতি উপহার দিতে পারিনি। হাসপাতাল, সরকারি অফিস- সব জায়গা থেকে দুর্নীতি পালানোর কথা। কিন্তু এখনো দুর্নীতি চলছে।

গণসংহতি আন্দোলন টাঙ্গাইল জেলার সংগঠক তুষার আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন শহীদ মোহাম্মদ ইমনের ভাই মোহাম্মদ সুজন, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য আলিফ দেওয়ান, জাতীয় পরিষদের সদস্য আশরাফুল আলম সোহেল, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সদস্যসচিব ফারজানা জেসমিন, মধুপুর উপজেলার সংগঠক গোবিন্দ বর্মণ, নাগরপুর উপজেলার সংগঠক আলিম মোল্লা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের টাঙ্গাইল জেলার দপ্তর সম্পাদক প্রেমা সরকার, টাঙ্গাইল পৌর কমিটির আহ্বায়ক আদিবা হুমায়রা, সদস্য শিশির সাহা প্রমুখ।

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।