ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ জুন ২০২৫, ২০ জিলহজ ১৪৪৬

রাজনীতি

যে কোনো সময় দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:২৭, জুন ১৬, ২০২৫
যে কোনো সময় দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান

ঢাকা: ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরতে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলীয় সূত্র ও ঘনিষ্ঠজনদের মতে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী দেড় মাসের মধ্যেই তিনি লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে পারেন।

দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। তিনি নিজেও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে এখন দৃঢ় মনোভাব পোষণ করছেন। তার ফেরা হতে পারে যে কোনো সময়।  

লন্ডন সফর শেষে সদ্য দেশে ফেরা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। তিনি যখন ইচ্ছা, তখনই দেশে ফিরতে পারেন। ’

এর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার সময় নিয়ে ইঙ্গিত দেন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার। গত ১১ জুন এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন- ‘তিনি লন্ডন থেকে ফিরছেন ৩৬ জুলাইয়ের আগেই। ’

আশরাফ কায়সারের এ পোস্টের পর বিষয়টি নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হয়, সে সময় বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তারেক রহমান ৫ আগস্টের মধ্যেই দেশে ফিরবেন। দিন চূড়ান্ত না হলেও এই তারিখের মধ্যেই যে তিনি দেশে ফিরছেন, সেটি অনুমেয়।  

বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডন সফর শেষে দেশে ফিরে আসার আগেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘তার (তারেক রহমান) তো দেশে ফিরতে কোনো অসুবিধা নেই। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, যে কোনো সময় ইচ্ছা করলেই দেশে ফিরতে পারেন। ’ তখন থেকেই বিষয়টি টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়।  

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এখন এমন একজন নেতার উপস্থিতি প্রয়োজন, যিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সক্ষমতা রাখেন। জাতীয় ও সাংবিধানিক সংকটময় মুহূর্তে সুদূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্ব ছাড়া স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন শুধু বিএনপির জন্য নয়, গোটা রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ এক মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে।

সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আমীন আল রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার যে শারীরিক অবস্থা, তাতে দল ও দেশের মানুষ চাইলেও তার পক্ষে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান হিসেবে দেশ পরিচালনা করা কঠিন হবে। বয়সের চেয়েও বড় সমস্যা তার শারীরিক জটিলতা। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অনেকগুলো বড় অসুখে ভুগছেন। সুতরাং আগামী জাতীয় নির্বাচন যেদিনই হোক, সেই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে বিএনপি সরকার গঠনের সুযোগ পেলে খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী তো বটেই, সংসদীয় পদ্ধতিতে তুলনামূলক কম দায়িত্বপূর্ণ রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হওয়াটাও কঠিন হবে বলে মনে হয়। তার মানে দলের দ্বিতীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) হিসেবে তার ছেলে তারেক রহমানই যে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেবেন- সেটি দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা যেমন বিশ্বাস করেন, তেমনি অন্য দল এমনকি যারা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে আছেন, সম্ভবত তারাও মনে করেন। ’

তারেক রহমানের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে বিএনপির ভেতরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ও আশাবাদ। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, তাকে বরণ করতে রাজধানী ঢাকায় ২০ লাখেরও বেশি নেতাকর্মীর সমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তাদের বিশ্বাস, দেশে ফিরেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সরাসরি নেতৃত্ব দেবেন তারেক রহমান। বিশেষ করে দল পুনর্গঠন, প্রার্থী মনোনয়ন এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় তার বিকল্প নেই বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতারা। তার নেতৃত্বেই দল পুনরায় শক্তিশালীভাবে মাঠে ফিরবে—এমনটাই প্রত্যাশা দলের প্রতিটি স্তরে।

বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক ফলপ্রসূ বৈঠকের পরই তারেক রহমান দেশে ফেরার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো কারণে নির্ধারিত তারিখ পরিবর্তন হলেও, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি দেশে ফিরবেন। এর আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একাধিকবার তারেক রহমানের দ্রুত দেশে ফেরার বিষয়টি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, ১৩ জুন লন্ডনের ঐতিহাসিক ডরচেস্টার হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নির্বাচনসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে কূটনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন তারেক রহমান। ওই বৈঠক সফল হওয়ায় বিএনপিকে ঘিরে দেশি-বিদেশি চাপে থাকা নানা ষড়যন্ত্র অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের শপথ গ্রহণ নিয়ে বিএনপি ও সরকারের মধ্যে যে নতুন করে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল, তাও অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে এই আলোচনার পর।

এদিকে, নির্বাচন কমিশন ও নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে ইঙ্গিত মিলেছে— জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। অর্থাৎ হাতে রয়েছে মাত্র সাড়ে সাত মাসের মতো সময়। এমন প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেখছেন ‘দৃশ্যপট পাল্টে দেওয়ার মতো এক সিদ্ধান্ত’ হিসেবে। তাদের মতে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী অনিশ্চয়তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। কেউ কেউ একে ‘ষড়যন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

এসবিডব্লিউ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।