ঢাকা, রবিবার, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৮ জুন ২০২৫, ১১ জিলহজ ১৪৪৬

রাজনীতি

নির্বাচন এপ্রিলে, বিএনপি অনড় ডিসেম্বরে!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:৪৭, জুন ৭, ২০২৫
নির্বাচন এপ্রিলে, বিএনপি অনড় ডিসেম্বরে!

ঢাকা: ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে- অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এমন ঘোষণা দেওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের উত্তাপ ছড়িয়েছে।  

তার এ ঘোষণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি।

দলটি তাদের পুরোনো অবস্থানে অনড় থেকে জানিয়ে দিয়েছে, নির্বাচন এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরপর রাতেই বৈঠকে বসে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি থেকে বিএনপি এক চুলও নড়বে না। সভা শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনগণের বিপুল আত্মত্যাগে অর্জিত বিজয় সত্ত্বেও নির্বাচন অনুষ্ঠান বিলম্বিত হওয়ায় মানুষ হতাশ ও ক্ষুব্ধ। রমজান, পরীক্ষা ও বৈরী আবহাওয়ার বাস্তবতা বিবেচনায় ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া জরুরি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় আরও বলা হয়, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে উপস্থাপন করেননি। বরং রমজান ও বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে নির্বাচন করাটা নিজেই এক ধরনের সংকট তৈরি করবে। একই সঙ্গে এ ভাষণে ‘রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা লঙ্ঘন’ এবং ‘গুরুত্বহীন বিষয়’ হিসেবে বন্দর ও কোরিডরের মতো প্রসঙ্গ তোলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দলটি।

বিএনপির বক্তব্যের বিপরীতে কিছু রাজনৈতিক দল আবার প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, যদি এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সংস্কার বাস্তবায়নের ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের কোনো আপত্তি নেই।

নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি গুছিয়ে নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় পেলে এনসিপি যে উপকৃত হবে, এমন অভিমতও দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীও প্রকাশ করেছে সন্তোষ। দলের আমির শফিকুর রহমান বিবৃতি দিয়ে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ জাতিকে আশ্বস্ত করেছে। তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করবেন-এমন প্রত্যাশা আমাদের।  

তিনি আরও যোগ করেন, জুলাই সনদ ও সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এপ্রিলের নির্বাচন প্রস্তাবনায় সবচেয়ে লাভবান হবে এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী। নতুন দল হিসেবে এনসিপির কাছে সময়ই এখন মূল পুঁজি। একইভাবে, জামায়াত বিতর্কিত অতীত থেকে বেরিয়ে নতুনভাবে নিজেদের জনসমর্থনের প্রমাণ দেওয়ার সুযোগ পাবে।

তবে, এপ্রিলের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় জাতীয় ঐক্যের বদলে নতুন করে বিভাজনের আভাস মিলছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যেখানে নির্বাচন এগিয়ে আনতে চায়, সেখানে এনসিপি-জামায়াতসহ কিছু দল সময় বাড়ানোর পক্ষেই রয়েছে। ফলে, দেশের রাজনৈতিক মাঠে আগামী দিনগুলোতে উত্তাপ আরও বাড়বে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

এখন দেখার বিষয়-সরকারপক্ষ কীভাবে সব পক্ষের মতামতকে মূল্যায়ন করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু আপাতত এ প্রশ্নটিই বড় হয়ে উঠছে, নির্বাচনের চার মাস পেছানোর সিদ্ধান্ত—গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে, নাকি নতুন করে অনিশ্চয়তার জন্ম দেবে?

এসবিডব্লিউ/এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।