বর্ষার দিনে মোটরসাইকেল চালানো যেমন রোমাঞ্চকর মনে হয়, তেমনি বিপজ্জনকও। ভেজা রাস্তায় পিচ, কাদা, বালি, তেলের দাগ কিংবা লুকানো গর্ত— সবকিছুই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভেজা রাস্তায় মোটরসাইকেল চালাতে হলে সর্বাগ্রে গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। হঠাৎ ব্রেক কষা বা হঠাৎ গতি বাড়ানো ঝুঁকি বাড়ায়, তাই গিয়ার পরিবর্তনও হওয়া চাই মসৃণ। একইসঙ্গে সামনে থাকা গাড়ির সঙ্গে দূরত্ব স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি রাখতে হবে, কারণ ভেজা রাস্তায় ব্রেক করার দূরত্ব প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। পানি জমে থাকা জায়গা এড়িয়ে চলাই উত্তম, কারণ এর নিচে গর্ত বা পাথর লুকিয়ে থাকতে পারে এবং টায়ার সহজেই গ্রিপ হারাতে পারে।
ব্রেক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বাড়তি সতর্কতা জরুরি। সামনে ও পেছনের ব্রেক একসাথে, তবে আস্তে ব্যবহার করাই নিরাপদ। আকস্মিক ব্রেক করলে চাকা লক হয়ে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় সবসময় হেডলাইট জ্বালানো উচিত এবং উজ্জ্বল বা প্রতিফলিত জ্যাকেট পরা নিরাপত্তা বাড়ায়। শুকনো ও মনোযোগী থাকতে ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট, প্যান্ট ও গ্লাভসও সহায়ক।
মোটরসাইকেলের রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার। টায়ারের ট্রেড গভীরতা অন্তত ১.৫ মিমি থাকা উচিত, পাশাপাশি ব্রেক, লাইট ও টায়ার নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। তেলের দাগ, ভেজা রঙ করা লাইন, ম্যানহোল বা ধাতব প্লেটের ওপর দিয়ে না যাওয়াই নিরাপদ, কারণ এগুলো প্রথম বৃষ্টিতে বিশেষভাবে পিচ্ছিল হয়ে ওঠে। ভাইজর পরিষ্কার রাখা, প্রয়োজনে অ্যান্টি-ফগ স্প্রে ব্যবহার করাও দৃশ্যমানতা বাড়াতে সহায়ক।
স্লাইড শুরু হলে আতঙ্কিত না হয়ে ধীরে গতি কমাতে হবে এবং দৃষ্টি রাখতে হবে সামনের দিকে। বাঁক নেয়ার আগে গতি কমানো জরুরি, শরীর যতটা সম্ভব সোজা রেখে চাকার গ্রিপ বাড়ানো দরকার। আর ভ্রমণের আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে বের হওয়া সবচেয়ে নিরাপদ অভ্যাসগুলোর একটি। প্রবল বর্ষা বা ঝড়ের সময় যাত্রা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
সবশেষে মনে রাখতে হবে, বৃষ্টির দিনে মোটরসাইকেল চালানো মানেই বাড়তি সতর্কতা। মসৃণ চালনা, সঠিক দূরত্ব, নিরাপদ গিয়ার এবং রাস্তায় বাড়তি মনোযোগ— সব মিলিয়েই ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব। গন্তব্যে পৌঁছানো গুরুত্বপূর্ণ হলেও তার চেয়েও জরুরি হলো নিরাপদে যাত্রা শেষ করা।
এমজে