ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২১ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদ হারাবেন পাপুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:০৭, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদ হারাবেন পাপুল লক্ষীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুল।

ঢাকা: কুয়েতের আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদ হারাবেন লক্ষীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুল। বিষয়টি কুয়েতের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে সংসদ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে শহীদ ইসলাম পাপুলকে কুয়েতের একটি আদালত ৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা (১৯ লাখ কুয়েতি রিয়াল) জরিমানা করেছে।

সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনযায়ী কোনো সংসদ সদস্য নৈতিক স্খলনজনিত কারণে আদালতে দণ্ডিত হলে তার সদস্য বাতিল হয়ে যাবে। তবে কুয়েতের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাগজপত্র পাওয়ার পর এ বিষয়ে আইনগত দিকগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। এর পর সংবিধান অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু রায়টি বিদেশের আদালতে হয়েছে তাই আগে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের জানতে হবে। তারা (কুয়েত) আমাদের আনুষ্ঠাকিভাবে জানালে, আমরা জানান পর বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দেখবো। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিষয়টি জানার পর পর্যালোচনা করে স্পিকার নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন। আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে। এর নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্পিকার সংসদকে অবহিত করবে। যেহেতু রায়টি অন্য একটি দেশের আদালত দিয়েছে তাই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের জানানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া কুয়েতের আদালতের এই রায়ই চূড়ান্ত কিনা অর্থাৎ উচ্চ আদালতে আপিল করার কোনো সুযোগ পাবে কি না। উচ্চ আদালতে আপিল হলে রায় পর্যন্ত দেখতে হবে। যেমন উচ্চ আদালত আপিলের সুযোগ রয়েছে, কুয়েতে এরকম কোনো বিষয় আছে কি না এগুলোও দেখার বিষয় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুর ই আলম চৌধুরী লিটন বাংলানিউজকে বলেন, রায়ের কপি পেলে সংবিধান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আইনে যেটা বলা আছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ প্রবীন পার্লামেন্টারিয়ান উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ বাংলানিউজকে বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে কোনো সংসদ সদস্য দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তার সদস্য বাতিল হয়ে যাবে। তবে বিষয়টি স্পিকার নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন। নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬ (২) অনুসারে, কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি (ক) কোন উপযুক্ত আদালত তাঁহাকে অপ্রকৃতিস্থ বলিয়া ঘোষণা করেন; (খ) তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হইবার পর দায় হইতে অব্যাহতি লাভ না করিয়া থাকেন; (গ) তিনি কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন; (ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে।

তিনি বলেন, এই সংবিধান আমাদের প্রজাতন্ত্রের জন্য। আর ওই সংসদ সদস্য কুয়েতে দণ্ডিত হয়েছেন। তাই এখানে একটা সাংবিধানিক ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। তবে দণ্ডের পর নৈতিকভাবে তার সংসদ সদস্য পদে থাকা উচিত বলে মনে করিনা।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন,দণ্ডিত ব্যক্তির তো আপিল করা সুযোগ থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি স্পিকারের কাছে আসলে তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘন্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
এসকে/ইএস/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।