ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

বগুড়ার প্রবীণ শিক্ষক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব শ্যামল ভট্টাচার্য আর নেই

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:৫৭, নভেম্বর ৫, ২০২০
বগুড়ার প্রবীণ শিক্ষক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব শ্যামল ভট্টাচার্য আর নেই

বগুড়া: বগুড়ার প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও নাট্য ব্যক্তিত্ব শ্যামল রঞ্জন ভট্টাচার্য আর নেই।

বুধবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক মেয়েসহ অসংখ্যক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বাংলানিউজকে জানান, শ্যামল ভট্টাচার্য মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এবং বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভূগছিলেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, শ্যামল ভট্টাচার্য বেশ কিছুদিন ধরেই শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। গত ২৯ অক্টোবর মস্তিক্ষে রক্তক্ষরণ হলে তাকে বগুড়া শজিমেক হাসপতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালেও নেওয়া হয়। তবে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে আবার বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়। সেই থেকে তিনি আইসিইউতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

শ্যামল ভট্টাচার্য ১৯৩৯ সালের ১০ আগস্ট বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালের ১৬ জানুয়ারি বগুড়া জিলা স্কুলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্টস বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। এছাড়া সংস্কৃত এবং আরবি ভাষাতেও তিনি সমান দক্ষ ছিলেন। প্রায় ৩৩ বছর শিক্ষকতা শেষে ২০০০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ডিপ্লোমা প্রকৌশলী শ্যামল রঞ্জন ভট্টাচার্য শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হওয়ার আগে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ শেষে তৎকালীন গ্রেটার চিটাগাং ইলেকট্রিসিটি বোর্ডে সাব অ্যাসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।

ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি সচেতন শ্যামল ভট্টাচার্য ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বগুড়ায় ৩০০ ছাত্রকে নিয়ে মিছিল বের করেছিলেন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি নিজ মহল্লা জলেশ্বরীতলা এলাকার নিরক্ষরদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সহপাঠীদের নিয়ে নৈশ বিদ্যালয় চালু করেছিলেন। দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নের সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের জেলা কমিটির পাঠাগার সম্পাদক মনোনীত হয়েছিলেন। শিক্ষা দিয়ে মানুষকে আলোকিত করার উদ্যোগটি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছিলেন শ্যামল ভট্টাচার্য। তার উদ্যোগেই বগুড়ায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়।

শিক্ষার পাশাপাশি নাট্য আন্দোলনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন শ্যামল ভট্টাচার্য। ১৯৭২ সালে তিনি বগুড়া নাট্য গোষ্ঠী নামে একটি নাটকের দল গঠন করেন। নাট্য মঞ্চের নিয়মিত শিল্পী শ্যামল ভট্টাচার্য ১৯৮৭ সালে ‘বগুড়া নাট্য দল’ নামে নতুন আরও  একটি দল গঠন করেন। নাট্য আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে নতুন মুখ তৈরিতেও কাজ করে গেছেন তিনি। এজন্য শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে বগুড়া নাট্য দলের কার্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস নিতেন গুণী এ নাট্য ব্যক্তিত্ব।  

সর্বশেষ ২০১৩ সালে তিনি ‘খারিজ’ নামে একটি নাটকে অভিনয় করেন। প্রবীণ এ শিক্ষাবিদ ও নাট্য ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে বগুড়ার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০২০
কেইউএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।