ঢাকা, বুধবার, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

১২ আইটেম, ১২ মসলায় ‘বড় বাপের পোলায় খায়’

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৫৪, মে ৭, ২০১৯
১২ আইটেম, ১২ মসলায় ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ মারুফ বিক্রি করছেন ঐতিহ্যবাহী বড় বাপের পোলায় খায়/ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

ঢাকা: দুপুরের তীব্র রোদের মধ্যেই চকবাজার শাহী মসজিদের সামনের রাস্তায় হাক-ডাক; ‘বড় বাপের পোলায় খায়/ঠোঙ্গা ভইরা লইয়া যায়…’। টেবিলের উপরে হরেক শাহী খাবারের পসরা। খাসির পা, আস্ত মুরগি-কোয়েল-কবুতরের রেজালা, সুতি কাবাব, কাঠি কাবাব- কাবাবের নানান পদ। বাতাসেও সেই খাবারের সুগন্ধি। সব আয়োজন রমজান কেন্দ্র করে, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার ঘিরেই।

পুরান ঢাকার এসব শাহী খাবারের স্বাদ নিতে পুরান ঢাকাসহ নতুন ঢাকা তথা রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই আসছেন মানুষ, রোজার শুরুর দিনটি চকবাজরের শাহী খাবার সামগ্রী কিনে ইফতার করতে চান তারা।  
 
কয়েক পদের খাবার মিশিয়ে তৈরি হয় ‘বড় বাপের পেলায় খায়’ আইটেম।

ভাড়া চিড়ার সঙ্গে অন্তত ডজন খানেক শাহী খাবার এবং সুগন্ধি মসলা মিলে এই আইটেমই সবার কাছে পছন্দনীয় ও ঐতিহ্যের। আর সঙ্গে আলাদা আইটেম নেওয়ার সুযোগ তো রয়েছেই।
 
মসজিদের ঠিক সামনে লম্বা দু’টি টেবিলে শাহী খাবার সাজিয়ে বিকিকিনি করছেন মো. মারুফ। দুপুরের তখন দু’একজন ক্রেতা আসছেন, ঠোঙ্গায় ভরে খাবার কিনছেন। এক টেবিল ঘিরে বিক্রেতাদের অন্তত ৭/৮ জন ব্যস্ততায় মগ্ন।   
 
পুরান ঢাকার বাহারি ইফতারএই ফাঁকে কথা হয় মারুফের সঙ্গে। খাবারের আইটেমগুলোর নাম জানান তিনি। ‘বড় বাপের পোলায় খায়’, সুতি কাবাব, খাসির লেগ (পা), মগজ, কোয়েল-মুরগি-কবুতরের রেজালা, আলু ভাজি, ডিম, চিড়া, মুরগির কলিজা।
 
এসব ১২ আইটেম দিয়ে তৈরি ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ কেজিপ্রতি এবার বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা। গতবারে চেয়ে বেড়ে ১০০ টাকা। এছাড়া অন্য আইটেমের দাম আগেরবারের মতো রয়েছে বলে জানান মারুফ।
 
খাসির সুতি কাবাব ৮০০ টাকা, গরুর সুতি কাবাব ৫০০ টাকা, খাসির লেগ প্রতি পিস ৫০০ টাকা, দেশি মুরগির পিস ৩৫০ টাকা, পাকিস্তানি ২৫০ টাকা, কোয়েল পাখি ৬০ টাকা।
 
পুরান ঢাকার বিশাল ইফতার বাজারমারুফ জানান, ‘বড় বাপের পোলায় খায়’, আইটেমের দোকান এবার চারটি। সব আমাদেরই বংশের। আমার বড় আব্বুর পর দাদা, এরপর বাবা এবং আমিও এখন ইফতার বেচি।   
 
চার পুরুষ ধরে যে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিক্রি করছেন তার সূচনা করেন মারুফের বড় আব্বু লালবাগের হাজি রহিম বক্স লেনের কামিল মহাজন। এই ইফতারের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তারাও।
 
‘১২ আইটেম ১২ মসলা মিলে হয় ‘বড় বাপের পোলায় খায়’, কাগজের ঠোঙ্গায় ভরে বিক্রি করা হয় এই আইটেম, এজন্য নামটিও তেমন; বলেন মারুফ।
 
বেচাকেনা কেমন চলছে জানতে চাইলে মারুফ বলেন, আল্লায় যা দেয় তাই হবে। বেশ ভালোই চলছে। দুপুর থেকেই লোকজন ইফতার কিনছেন।
 
দুপুরে রোদের মধ্যেই আজিমপুর থেকে ইফতার কিনতে এসেছেন চাকরিজীবী জাকির আজম। তিনি বলেন, বাচ্চারা খাসির লেগ থেকে চেয়েছে, এ কারণেই আসা।
 
পুরান ঢাকার ইফতার গোটা ঢাকাবাসীরই আকর্ষণ। বনশ্রী থেকে ইফতার নিতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী রুহুল আমিন। বলেন, এদিকে কাজ ছিল, তাই ইফতারও কিনে নিলাম।
 
‘বড় বাপের পোলায় খায়’- আইটেম মিক্স করার ব্যস্ততার মধ্যে কথা হয় মারুফের বাবা মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে।
 
গতবছর ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা বিক্রি হলেও এবার ১০০ টাকা বাড়ানোর কারণ নিয়ে মোহাম্মদ হোসেন বলেন, এবার অরিজিনাল সব দোকান। নকল দোকান উঠিয়ে দিয়েছে। ভালো মানের খাবার তাই দামটাও একটু বেশি।
 
আর শুক্রবার স্পেশাল আইটেম দিয়ে তৈরি হবে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’, দাম পড়বে ৭০০ টাকা; বলেন মারুফ।
 
এসব আইটেমের পাশাপাশি পুরান ঢাকার হান্নান মেম্বারের শাহী সুতি কাবাব লোহার পাইপ দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ক্রেতা আকর্ষণের জন্য। এর কাটতিও ছিল বেশ ভালো। গরুর সুতি কাবার কেজি হাজার টাকা এবং খাসির এক হাজার ৪০০ টাকা।  
 
সুতি কাবাব বিক্রেতা নাজিম উদ্দিন রোডের আল-আমিন বলেন, আমার বড় নানা, নানার পর বাবা সুতি কাবাব বিক্রি করেছেন। এখন আমি করছি। শুরুর দিন বেচাকেনা বেশ ভালোই বলে জানান আল-আমিন।  
 
দুপুর থেকে ইফতারের পরও পুরান ঢাকার এসব ঐতিহ্যবাহী ইফতার সামগ্রী বিক্রি হয় বলে জানান বিক্রেতা এবং উপস্থিত ক্রেতারা। ঐতহ্যিবাহী ইফতার সামগ্রী কেনার পাশাপাশি সেলফিও তুলছেন কেউ কেউ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৯
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।