ঢাকা, বুধবার, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

ফের ফুঁসে উঠেছে খুলনার পাটকল শ্রমিকরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:০৯, মে ৬, ২০১৯
ফের ফুঁসে উঠেছে খুলনার পাটকল শ্রমিকরা প্লাটিনাম ও খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিকরা মিল গেটের সামনে দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন/ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: বকেয়া পাওনার দাবিতে ফের ফুঁসে উঠেছেন খুলনার পাটকল শ্রমিকরা। শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনার পাটকল শ্রমিক সেক্টরে শ্রমিক অসন্তোষ ফের দানা বাঁধছে। উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পাটকল সেক্টর। এ অবস্থা চলতে থাকলে যে কোনো ঘটতে পারে মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা। 

রোববার (৫ মে) বিকেল থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। সোমবার (৬ মে) দিনভর মিল বন্ধ রেখে পাটকলের ভেতরে দফায় দফায় মিছিল-সমাবেশ চলছে।

মঙ্গলবারও উৎপাদন বন্ধ এবং বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

সোমবার সকালে খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে মিল গেটে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। পরে প্লাটিনাম ও খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিকরা নিজেরা চাঁদা তুলে মিল গেটের সামনে খাবার রান্না শুরু করেন।

সেখানে প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক নূর ইসলাম বলেন, কাজে যোগ দেওয়ার পরে শুধু শবেবরাতে এক সপ্তাহের মজুরি দিয়েছে। আগের মজুরি তো দেয়ইনি, বরং চলতি সপ্তাহেরও মজুরি দেয়নি। সবকিছু সহ্য করা যায়, পেটের ক্ষুধা কীভাবে সহ্য করি।

তার সঙ্গে থাকা শ্রমিক আবদুর রহমান বলেন, কাল থেকে রোজা, ঘরে একটা চালও নেই। রাতে কিছু খেয়ে রোজা রাখবো সেই উপায়ও নেই। কাজ করি, আমাদের পাওনা টাকা দেবে না কেন?

শ্রমিকরা জানান, বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে গত ২ এপ্রিল থেকে ৭২ ঘণ্টা পাটকলে ধর্মঘট করেন তারা। এরপর ১৫ এপ্রিল থেকে তারা ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু করেন। ১৫ এপ্রিল রাতে ঢাকায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও বিজেএমসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের পর তাদের আশ্বাসে শ্রমিক নেতারা কর্মসূচি স্থগিত করেন। ওই বৈঠকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বকেয়া সব মজুরি পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন বলেন, ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাধ্য হয়েই শ্রমিকরা রাজপথে নেমে এসেছে। তারা তো ভিক্ষা চাইছে না, নায্যা পাওনা চাইছে। তিনি বলেন, ৭ ও ৮ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের দাবি মানা না হলে সিবিএ-নন সিবিএ সবাই মিলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমীন বলেন, বিজেএমসির সঙ্গে বৈঠকের পর গত তিন সপ্তাহে মাত্র একটি মজুরি দিয়েছে। আগের বকেয়া মজুরি তো দেয়ইনি, বরং চলতি দুই সপ্তাহের মজুরিও দেয়নি। টাকার অভাবে শ্রমিক পরিবারগুলো অনাহারে-অর্ধাহারে রয়েছে। রোজা চলে আসছে, একটি পরিবারেও সেহরি বা ইফতারের খাবার নেই। ক্ষুধার কষ্টে শ্রমিকরা নিজেরাই উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, সোমবারের মধ্যে মজুরি দেওয়া না হলে আগামী ৭ ও ৮ মে উৎপাদন বন্ধ এবং বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নতুন রাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধ করা হবে। মঙ্গলবার প্রথম ইফতারি শ্রমিকরা রাজপথেই করবে।

স্টার জুট মিলের প্রকল্প প্রধান শাওন মাহমুদ বলেন, শ্রমিকদের ধর্মঘটের বিষয়টি বিজেএমসিকে জানিয়েছি। সেখান থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

এ ব্যাপারে বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী সাজ্জাদ হোসেন জানান, সার্বিক অবস্থা তিনি বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছেন। সেখান থেকে তাকে জানানো হয়েছে এখনও অর্থ সংস্থান হয়নি। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার আগে বিষয়টি সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা কম।

বাংলাদেশসময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৯
এমআরএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।