শুক্রবার (০৩ মে) গভীর রাত থেকে কয়রায় ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে কখনও হালকা কখনও তীব্র গতিবেগে বাতাস বইছে। বাতাসের সঙ্গে থেকে থেকে হচ্ছে ব্যাপক বৃষ্টিও।
শনিবার (০৪ মে) সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। রাতের ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার খবর পাওয়া গেছে।
তবে কয়রাবাসীর কাছে বেশি আতঙ্কের বিষয় ভাঙা বেড়িবাঁধ। রাতের জোয়ারে বেড়িবাঁধের বেশ কিছু অংশ ভেঙে গেছে।
এলাকাবাসী বলছেন, ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই। শুক্রবার গভীর রাতে ফণীর প্রভাবে কয়রার ঘাটাখালীর বাঁধের অনেক স্থান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দুপুরের জোয়ারে কি হবে জানিনা।
তারা অভিযোগ করছেন, উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারী মানুষের একটা অংশ চায় বাঁধ হোক (বৃহৎ অংশ), আরেকটা অংশ যারা চায় মাঝে মাঝে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাক। বিপদ এলে সরকার এই এলাকার মানুষকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করে, বানভাসী মানুষের জন্য ত্রাণ পাঠায়। অথচ বাঁধগুলো যদি ঠিক করে এসব কিছুরই প্রয়োজন হয় না। কিন্তু তা করে না। বাঁধগুলোর যে অবস্থা একটু ধাক্কা এলেইতো সব শেষ। এতো এতো টাকা খরচ না করে টেকসই বাঁধ রক্ষার ব্যবস্থা করলেই মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে।
কয়রার বাসিন্দা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু সাঈদ খান বলেন, দক্ষিণ বেদকাশীর গোলখালী এলাকায় শুক্রবার গভীর রাতের জোয়ারে পানি ছাপিয়েছে। বাঁধের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশ আংটিহারা এলাকা।
তিনি জানান, কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা এলাকায় শনিবার সকালে স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামতে স্বাধীন সমাজকল্যাণ সংস্থার সদস্যরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেছেন।
খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কয়রার বেড়িবাঁধের বেশকিছু এলাকা রাতের জোয়ারে ভেঙে গেছে। দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ১৪/১ পোল্ডারে গোলখালী গ্রামে কপোতাক্ষ নদের মোহনায় ওয়াপদা বেড়িবাঁধ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। রাতে কয়েক জায়গায় ভেঙে গেছে। এছাড়া কয়রার ঘাটাখালি বেড়িবাঁধও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। পানির যে চাপ তাতে যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে গ্রাম তলিয়ে সিডর-আইলার মতো ক্ষতি হতে পারে।
তিনি জানান, শনিবার সকালে মাটিয়াভাঙা ও গোলখালী বেড়িবাঁধের যেসব স্থান ভেঙে গেছে সেখানে এলাকাবাসীকে নিয়ে সংস্কার করা হয়েছে।
ঘাটাখালী অবস্থানরত কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, কয়রার কপোতাক্ষ নদের ঘাটাখালী বেড়িবাঁধে রাতে ঝড়ের আঘাতে রাস্তা আর নেই, আছে রাস্তার কঙ্কাল। সামনের জোয়ারে শেষ রক্ষা হবে কিনা এ নিয়ে চিন্তা।
কয়রার বাসিন্দা জিএম মহাইমিনুল ইসলাম রকিব বলেন, ৪ নং মহারাজপুর ইউনিয়নে দশহালিয়া গ্রামে ওয়াপদার বেড়িবাঁধের অবস্থা খুব খারাপ। দুপুরের জোয়ারের আগে যদি বাঁধ না সংস্কার করা হয় তাহলে মহারাজপুর ও বাগালিতে পানি ঢুকে পড়বে।
অপরদিকে শুক্রবার রাতে খুলনার দাকোপের বানীশান্তা বাজার এলাকার পশুর নদীর বাঁধ ভেঙে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টার দিকে গুনারী বৈদ্যবাড়ি এলাকায় বাঁধ ভেঙেও কিছু এলাকা প্লাবিত হয়।
একইভাবে পাইকগাছায়ও ফণীর প্রভাবে থেমে থেমে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলাগুলোর অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। আশ্রয়কেন্দ্র কাণায় কাণায় পূর্ণ হয়ে গেছে। অনেকেই এক আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা না পেয়ে বৃষ্টির মধ্যে অন্য আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন।
এদিকে শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার থেকে মহানগরীতে থেমে থেমে দমকা হাওয়া বৃষ্টি হচ্ছে। যা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৯
এমআরএম/জেডএস