ঢাকা, সোমবার, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

এখনও বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিকরা  

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৩৭, মে ১, ২০১৯
এখনও বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিকরা   টমেটো ক্ষেতে কাজ করছেন নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা। ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: মহান মে দিবসের ১২৯ বছর পূর্তি হলেও এখনও নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন নারী শ্রমিকরা। সর্বক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয় না। মাঠে-ঘাটে কাজ করা পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে নারী শ্রমিকদের বেতন অর্ধেকেরও কম। 

প্রতিবাদ করলে অনেক সময় নারী শ্রমিকদের কাজে নেওয়াও হয় না। নানা বৈষম্যের মধ্যে অবহেলিত হয়ে কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা।

 

নারীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা এ বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন। অপরদিকে আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় দিন দিন শিশু শ্রমিকের সংখ্যাও বাড়ছে।  

দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এদিন বুকের রক্ত ঝরিয়েছিলেন শ্রমিকরা। আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে তিন লাখ শ্রমিক সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। এসময় আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভ সমুদ্রে। এক লাখ পঁচাশি হাজার নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে আরও অসংখ্য বিক্ষুব্ধ শ্রমিক লাল ঝান্ডা হাতে সমবেত হন সেখানে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলি চালালে অন্তত ১০ শ্রমিক প্রাণ হারান। তার পর থেকে আজকের এই দিনটি মহান মে দিবস ও শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
 
পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করতে শুরু করে।

১২৯ বছর বছর পূর্তি হলেও দিনাজপুরের নারীরা এখনও নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সব জায়গায় পুরুষের চেয়ে নারীদের অগ্রাধিকার না দিয়ে কাজ করানো হয়। আইনের পর্যাপ্ত প্রয়োগ না থাকায় জেলায় দিন দিন যানবাহন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশু শ্রমিকদের।  

দিনাজপুর শহরের শ্রমিকহাট হিসেবে খ্যাতি রয়েছে ষষ্ঠিতলা মোড়ের। এখানে প্রতিদিন ভোর থেকে রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রিসহ অন্যান্য শ্রমিকরা জমায়েত হন কাজের সন্ধানে। সেখানে কথা হয় মরিয়ম বেগম (৩৩) নামে এক নারী শ্রমিকের সঙ্গে। তিনি রাজমিস্ত্রির হেলপার হিসেবে কাজ করেন।  

গাড়ির গ্যারেজে কাজ করছে এক কিশোর।  ছবি: বাংলানিউজতিনি বাংলানিউজকে বলেন, একজন পুরুষ শ্রমিক সারাদিন কাজ করলে পায় ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। আর নারী শ্রমিকরা পায় ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। আমরা সব জায়গায় অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। কম টাকা দিলেও আমরা বাধ্য হয়ে কাজ করি। প্রতিবাদ করলে আমাদের কাজ থেকে বের করে দেওয়া হয়।  

দিনাজপুর সদর উপজেলার কৃষানবাজারের শ্রমিকরা টমেটো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষানবাজারের পাশের গ্রাম গোপালপুরের নারী শ্রমিক গীতা রানী রায় (৫৫) ও জোছনা বেগম (৩০) বাংলানিউজকে জানান, টমেটো ক্ষেতে সারাদিন কাজ করলে নারী শ্রমিকদের দেয়া হয় ১৫০ টাকা। অথচ একই কাজ পুরুষ শ্রমিকরা করলে তাদের দেয়া হয় ৩৫০ টাকা।  

তারা আরও জানান, নারী শ্রমিকরা সারাদিন কাজ করেন অথচ তাদের বেতন কম। কিন্তু পুরুষ শ্রমিকরা দিনে কাজ করে ও চা-সিগারেট খাওয়ার জন্য সময় নেন। তারপরও তাদের বেতন নারীদের চেয়ে অনেক বেশি।  

দিনাজপুর সদর উপজেলার মহব্বতপুর মাঝিপাড়া কৃষক সামসুদ্দিন (৫৯) বাংলানিউজকে জানান, এখানে ধানের মৌসুমে পুরুষ শ্রমিকদের দেয়া হয় ৪০০ টাকা। অথচ একই কাজ করলে নারী শ্রমিকদের দেয়া হয় ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। এধরনের বৈষম্য সব জায়গায়। তবুও তাই মাথা পেতে নেন নারী শ্রমিকরা।  

দিনাজপুর বাস টার্মিনাল এলাকায় গাড়ির গ্যারেজে কাজ করে সফিকুল ইসলাম (১৩) নামে এক কিশোর। সে বাংলানিউজকে বলে, বাবা-মা পড়ালেখার খরচ বহন করতে না পারায় পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। বন্ধুদের সঙ্গে মিশে যেন খারাপ পথে না যাই সেজন্য হাতের কাজ শেখার জন্য গাড়ির গ্যারেজে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এখানে পুরো সপ্তাহ কাজ করলে পাই মাত্র ২০০ টাকা।  

দিনাজপুর মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি মনোয়ারা সানু বাংলানিউজকে জানান, নারী-পুরুষের বৈষম্য অনেক আগে থেকে চলছে। আমরা বিভিন্ন আন্দোলন করেছি। কিন্তু নারীদের ব্যাপারে মহিলা পরিষদ আন্দোলন করলে চলবে না। সমাজের সবস্তরের মানুষকে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। তাহলেই নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর হবে। বর্তমানে দেশে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারীসহ বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে কাজ করছেন। কিন্তু খেটে খাওয়া নারীরা বেতনসহ বিভিন্ন দিক থেকে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫, মে ০১, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।