ঢাকা, বুধবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

গালে গালে বৈশাখ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:০৯, এপ্রিল ১৪, ২০১৮
গালে গালে বৈশাখ ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দুপুরের তপ্ত রোদে সিঁথির সিঁদুর ঘেমে আলতা হয়ে গড়িয়ে পড়ছে পারমিতা বাড়ৈর গাল দিয়ে। সেদিকে অবশ্য তার নজর নেই। ছয় বছরের মারিয়া পরেছে লাল টুকটুকে শাড়ি, পিচ ঢালা পথ স্পর্শ করেছে তার আচল। মারিয়ার খেয়াল নেই সেদিকেও। বরং সবাই ব্যস্ত অশুভ শক্তিকে বিতাড়ন করে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর সম্প্রীতির জোয়ারে শামিল হওয়ার আশায়।

শনিবার (১৪ এপ্রিল) আনন্দ উচ্ছ্বাসে নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছেন সবাই। পুরনো কষ্টকে ভুলে নতুনকে পাওয়ার আশায় এ আনন্দ।

একে অন্যকে জানাচ্ছে নববর্ষের শুভেচ্ছা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসা দর্শনার্থীরা সকাল থেকে উপভোগ করেছে বর্ষবরণের নানা আয়োজন। পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সবাই বরণ করে নিয়েছে ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে। সার্বজনীন এ উৎসবে নগরের পথে পথে এখন লাখো মানুষের ঢল।

নগরের অগণিত মানুষের হাজারো কথার আওয়াজের মধ্যেও কানে ভেসে আসছে মাইকে বাজা বৈশাখের গান, ‘আইলো আইলো আইলো রে, রঙ্গে ভরা বৈশাখ আবার আইলো রে...’। গানের এ রঙ মুখে মেখেই নিজেদের সাজাতে এবং অন্যদের বৈশাখী শুভেচ্ছা জানাতে ব্যস্ততা দেখা গেছে শিশু ও কিশোরীদের মধ্যে। বিশেষ করে রমণীদের কড়া পারফিউম, ফুলের মুকুট, হালকা মেকআপ আর গালের আল্পনার রঙে আজ শুধু নববর্ষের ঘ্রাণ।

রং তুলির আঁচড়ে লাল-সবুজে ‘এসো হে বৈশাখ’ গালে লিখে শাহবাগে ঘুরছিলেন নুসরাত জাহান। বললেন, বৈশাখকে স্বাগত জানাতে এবং নিজেকে বৈশাখের রঙে রাঙাতেই এ ছোট্ট আয়োজন। তার সঙ্গী ফায়রুজের গালে লেখা ‘শুভ নববর্ষ’। তিনি বললেন, সবাইকে তো আর একসঙ্গে ‘শুভ নববর্ষ’ বলা সম্ভব নয়, তাই এ চিন্তা। আমার দিকে যে তাকাবে, তাকেই আমি শুভ নববর্ষ জানাচ্ছি। এভাবে সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যেও আলাদা একটা আনন্দ আছে।

নিজের গালে রঙিন একতারা এঁকে অন্যদের গাল রাঙাচ্ছিলেন চারুকলার শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান। বললেন, বৈশাখের প্রথম দিনে আমাদের আনন্দগুলো ভাগাভাগি করে নিতেই হাতে রঙ তুলি নিয়ে ঘোরা। শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের গালে যখন তুলির আঁচড় দিয়ে বৈশাখ এঁকে দেই, তাদের আনন্দ দেখে নিজেরও ভালো লাগে। বৈশাখের রঙে যেন তখন আমরা সবাই একাকার হয়ে যায়।

মাথায় চুলে ঝুঁটি বেঁধে আর ক্লিপ এঁটে বাবার কোলে চড়ে শোভাযাত্রায় এসেছে ছোট্ট মেয়ে মৌরী। দু’টো গালই তার লাল-সাদা আর হলুদ রঙে রাঙানো। এক গালে রঙের আঁচড়ে ‘১২২৪ বৈশাখ’ আর অন্য গালে ‘শুভ নববর্ষ’ লেখা। ছোট্ট ছোট্ট আলতো কথায় মৌরী বললো, ‘রঙ আমার খুব ভালো লাগে। আমি বাবার কাছে চেয়েছি, বাবা আন্টির কাছ থেকে আমার গালে লাগিয়ে দিয়েছে। ’ মৌরীর বাবা বললেন, উৎসব আর আনন্দতো মূলত বাচ্চাদের জন্যই। ওদেরকে একটু সুন্দর করে সাজালে নিজেদেরও ভালোলাগে।

মৌরী অথবা নুসরাতের মতো হাজারো মানুষ আজ নিজেদের এভাবে রাঙাচ্ছেন বৈশাখের রঙে। এ রঙ নতুনের রঙ, পুরোনো সব গ্লানি ভুলে গিয়ে নতুনকে আমন্ত্রণ জানানোর রঙ। এ রংগুলোই রাঙিয়ে তুলবে আমাদের সত্ত্বাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৮
এইচএমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।