সেখানে বসেই দেখছে শোভাযাত্রার জনস্রোতের মাঝে ফুটে ওঠা আবহমান বাংলার গ্রামীণ চিত্র। বকের ঠোঁটে মাছ, পেঁচার নির্লিপ্ত চাহনি! এর পরে মহিষের পিঠে পাখির বিশ্রাম।
রাখাল বালক এর ঠিক পেছনে...আর তাই দেখে তামান্নাদের খুশি আর ধরে না! পাশ থেকে ছোট্ট উচ্ছ্বসিত হাত উঁচিয়ে দেখাচ্ছে ‘ওই যে মহিষ, পিঠে পাখি, পেছনে রাখাল। ’ তার কথা শুনে পাশের লোকজনও চেয়ে চেয়ে দেখছেন, আর ফিরে যাচ্ছেন নিজের ফেলে আসা গ্রামীণ স্মৃতিতে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা যে গ্রামীণ বাংলার মূর্ত প্রতীক, তা কচি-কাচাদের অভিব্যক্তি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। শুধু তামান্না কিংবা বুবলি-ই নয়, পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নিতে শত শত শিশু এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে।
পহেলা বৈশাখ শনিবার (১৪ এপ্রিল) বর্ষবরণের উৎসবে এসে বাবা-মার কোলেও থাকতে চায়নি অনেক শিশু। কোল থেকে নেমেই ছুটোছুটিতে মেতে উঠেছে তারা।
বুবলি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বাংলানিউজকে সে বলে ‘পহেলা বৈশাখ তো আমাদের। আর জানুয়ারি তো বিদেশি, ইংরেজি। গ্রামে যাই না। এখানে মহিষ, রাখাল দেখলাম। ভালো লেগেছে। ’
প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ঢাবির চারুকলা ইনস্টিটিউট আয়োজন করে মঙ্গল শোভাযাত্রার। এতে অংশ নেয় নানা শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ।
শোভাযাত্রা শেষে সবাই ছোটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে। সেখানে অনেক পরিবারকে মাদুর পেতে বসে যেতে দেখা গেছে। চলছে পান্তা-ইলিশ খাওয়া।
রোকসানা বেবি নামে এক শিক্ষিকা তার পুরো পরিবারকে নিয়ে এসেছেন বর্ষ বরণের উৎসবে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বছরের একটা দিন একটু আয়োজনের মধ্যে থাকতে ভালো লাগে। নিজের সংস্কৃতির সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত থাকতেই এসব করি। রাজধানীতে থেকে এর বেশি কিছু করারও নেই।
আনন্দধারায় বাড়তি মাত্রা যোগ করেছেন ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা। বেলুন, পাখা, নানা ধরনের খেলনা নিয়ে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন এদিক-ওদিক। বাজছে নানান বাঁশি আর ভেঁপু। বাবা-মাও তাদের সন্তানের হাতে এসব তুলে দিয়ে শান্তি পাচ্ছেন।
অবশ্য তরুণ-তরুণীরাই সবচেয়ে মাস্তিতে রয়েছে। ক্যামেরা নিয়ে সবাই ব্যস্ত ফটো তুলতে। সাজ যেমনই হোক তরুণীদের মাথায় ফুলের মুকুট যেন থাকবেই।
এদিকে শোভাযাত্রার পর ঢাবির একদল শিক্ষার্থীকে দেখা যায় মৌন মিছিল করতে। সম্প্রতি কোটা পদ্ধতি সংস্কার দাবি আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর ‘পুলিশি নির্যাতনে’র প্রতিবাদে এমন মিছিল করেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৮
ইইউডি/জিপি/এমএ/জেএম