ঢাকা, বুধবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

হারিয়ে গেছে 'দি সোনার বাংলা সার্কাস'

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:০৯, এপ্রিল ১৪, ২০১৮
হারিয়ে গেছে 'দি সোনার বাংলা সার্কাস' হারিয়ে গেছে 'দি সোনার বাংলা সার্কাস'

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): স্বাধীনতার আগে কেরানীগঞ্জের শিকারিটোলা এলাকায় সার্কাস চালু করেন স্থানীয় বাসিন্দা বনমালী মদক। মুক্তিযুদ্ধের পরে সেই সার্কাসের নাম করা হয় 'দি সোনার বাংলা সার্কাস'। তবে বনমালী সার্কাস নামেই বেশি পরিচিত।

বনমালী মদকের মৃত্যুর পর সার্কাস পরিচালনা করেন তার ছেলে বসন্ত কুমার মদক। মারা গেছেন তিনিও।

এক সময়ের দর্শকনন্দিত সার্কাসটি প্রায় ১৫ বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।

দি সোনার বাংলা সার্কাসের শিল্পী ছিলেন পর্বত মদক। পর্বত এখন শিল্পকলা একাডেমিতে শারীরিক কসরত দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সোনার বাংলা সার্কাসটি এক সময় খুবই জনপ্রিয় ছিলো। সারাদেশে আমরা খেলা দেখাতাম। সোনার বাংলা সার্কাসে প্রায় সাড়ে তিনশ’ শিল্পী কাজ করতেন। পশুপাখি দিয়েও খেলা দেখানো হতো। হাতি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ভাল্লুক, কুকুর, বিড়াল ও কয়েক প্রজাতির পাখি ছিলো। দলটি যে এলাকায় সার্কাস দেখাতে যেতো সেখানেই তাবু টানিয়ে বসবাস করা হতো। রান্নবান্নার কাজও ওখানেই হতো। সার্কাসই যেন ছিলো ঘর সংসার। সবই আজ ইতিহাস। আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এখন তাদের কেউ আমার মতো রাস্তাঘাটে খেলা দেখান, কেউ আবার রিকশা চালান। পশুগুলো কালক্রমে সেগুলো মারা গেছে।  

পর্বত কুমার ব্যক্তিগত ছবির অ্যালবাম দেখাতে দেখাতে বলেন, এক সময় সার্কাস খুব ভালো চলতো। মানুষ পরিবার নিয়ে সার্কাস দেখতে আসতো। কিন্তু এখন এক শ্রেণির অসাধু সার্কাস ব্যবসায়ীরা সার্কাসের নামে অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শন করে। এতে দর্শক কমে গেছে। তাছাড়া প্রশাসন এখন আগের মতো সার্কাসের অনুমতি দিতে চায় না। হারিয়ে গেছে 'দি সোনার বাংলা সার্কাস'

সোনার বাংলা সার্কাসের অন্য এক শিল্পী প্রমথ চন্দ্র মদক বাংলানিউজকে বলেন, আমি আগে সার্কাসে খেলা দেখাইতাম, এহন রাস্তায় মজমা (ওষুধ বিক্রি) জমাইয়া চলি। এক সময় সার্কাস খুব ভালো চলতো। তখন আমরাও খেয়ে পড়ে ভালো ছিলাম। এখন সার্কাসও বন্ধ হয়ে গেছে আমরাও কাজ ছেড়ে দিছি।

তিনি আরো বলেন, আজকের সার্কাস শিল্প ধ্বংসের পেছনে মালিকরাই দায়ী। তারা আমাদের ন্যায্য পাওনা না দিয়ে গড়িমসি করায় অনেক শিল্পী সার্কাস ছেড়ে চলে গেছে। আমরা চাই আবার সার্কাস চালু হোক, আমরাও কাজে ফিরে আসি। তবে আমাদের দাবি, সার্কাসের নামে বেহায়াপনা করে সার্কাসের বদনাম করা যাবে না।

শিকারিটোলা এলাকার বাসিন্দা বিমল চন্দ্র মদকের (৭০) সঙ্গে কথা হয়। কিছুটা ছোট পরিসরের সার্কাস দল সবুজ বাংলার মালিক তিনি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমিও সার্কাস পরিচালনা করতাম। কিন্তু পরে বন্ধ করে দিয়েছি। সার্কাসের এখন দুঃসময় চলছে।  

দেয়ালে টানানো একটি ছবিতে হাতির সঙ্গে দাঁড়ানো নিজের একটি ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, সার্কাস ছেড়ে দিয়েছি বছর দশেক আগে। বছর পাঁচেক আগে যখন হাতিটা মারা যায় তখন মনে হয়েছিল, আমার ছেলে মারা গেছে। এখনো রাতে ঘুমের ঘোরে সেইসব সোনালী দিনগুলো স্বপ্নে আসে।  

তিনি আরও বলেন, সার্কাস শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে শিল্পীদের পুনর্বাসন করা দরকার। শিল্পীরা হারিয়ে গেলে শিল্পও ধ্বংস হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৬  ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৮ 
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।