ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার জগৎপুর গ্রামের পাল পাড়ার মৃৎশিল্পী রবীন্দ্র পাল কথাগুলো বাংলানিউজকে বলেন। বয়স প্রায় ষাটোর্ধ্ব হলেও বাপ-দাদার হাতে শেখা এ মৃৎশিল্পের কাজ এখনও ছাড়তে পারেননি।
আসন্ন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জগৎপুর গ্রামের পাল পাড়ার তেমন কোনো কর্মব্যস্ততা নেই। হাসি নেই কোনো মৃৎশিল্পীর মুখেই। সবাই প্রায় রবীন্দ্র পালের মতোই হতাশ। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আগের মতো বৈশাখ মাসে কাজের ধুম থাকার কথা থাকলেও এখন সেখানে সুসান নীরবতা বিরাজ করছে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পাড়ার মৃৎশিল্পীদের মধ্যে কোনো উৎসাহ উদ্দীপনাই লক্ষ্য করা যায়নি। পাড়া জুড়ে ১০/১২টি বাড়ি থাকলেও মাত্র দুই/তিনটি বাড়িতে বৈশাখের কাজে ব্যস্ত।
কেন এভাবে ঐতিহ্যবাহী পাড়াটিতে বৈশাখের কাজের ধুম নেই জানতে চাইলে পাড়ার প্রবীণ মৃৎশিল্পী রসিক পাল বাংলানিউজকে বলেন, মাটির দাম বৃদ্ধি, কাঠ, আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই এ পেশা থেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। অনেকে আবার বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য করতেছে। আবার কেউ শখের বসেও করছেন।
তিনি বলেন, রাত-দিন পরিশ্রম করে তৈরি মৃৎশিল্পের কোনো সঠিকমূল্য বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। লাভ দূরের কথা, পুঁজিও আসছে না। ফলে কেউ এখন আর এ কাজে আগ্রহ পাচ্ছেন না। একই পাড়ার মৃৎশিল্পী রাজেশ পাল বাংলানিউজকে বলেন, বৈশাখ মাস আসার শুরুতে আমরা হাতি, ঘোড়া, বখ, পুতুলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা তৈরি করি। কিন্তু মেলাতে নিয়ে বিক্রি করলে তেমন লাভ হয় না। যার কারণে আমরা অন্য ব্যবসার চিন্তা করছি। সরকার যদি আমাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতো, তাহলে আমরা এ পেশায় থাকতে পারতাম।
মৃৎশিল্পীদের এ দূর অবস্থা নিয়ে কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংস্কৃতিকর্মী আল আমিন শাহীনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রয়োজনীয় পুঁজি ও চাহিদা স্বল্পতার কারণে মৃৎশিল্পীরা আগের মতো আর এ পেশায় আগ্রহ নেই। তারা অন্য পেশাকে ভালো মনে করছেন।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া প্লাস্টিকসহ অন্য অন্য সামগ্রী যেভাবে বাজার দখল করেছে, এতে মৃৎশিল্পীর চাহিদা কমে গেছে। তারা যেসব পণ্য তৈরি করছে, প্লাস্টিক সামগ্রীর কারণে তাদের পণ্য বাজারে টিকতে পারছে না। কিছু কিছু মানুষ এখনও এ পেশার সঙ্গে নিবড়িত। তাদের যদি সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো তাহলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে একটা ভালো মৃৎশিল্পের বাজার হতো। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই এ শিল্প আজ হারিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
আরবি/