দেশের নামকরা কয়েকটি সার্কাসের মধ্যে একটি ‘দি বুলবুল সার্কাস’। সার্কাসটির জন্মস্থান বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়।
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া টানা প্রায় ৪১ বছর অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দাঁপিয়ে বেড়িয়েছে দি বুলবুল সার্কাস ও এর ৭০ সদস্যের জনবল। সঙ্গে ছিল নানা ধরনের খেলার সামগ্রী ও জীবজন্তু। এখনও এসবের প্রায় সবই আছে। শুধু অনুমতির অভাবে বছরখানেক ধরে ঐতিহ্যবাহী সার্কাসটি বন্ধ।
এদিকে প্রায় ৮৫ বছর বয়সী আব্দুস সাত্তার এখন অনেক অসুস্থ। দেখভাল করছেন তার ছেলেরা। কিন্তু বন্ধ সার্কাসের জনবল আর জীবজন্তুর ব্যয় বহন করতে গিয়ে ঋণের বোঝা চেপে বসছে তাদের ঘাড়ে। চার ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে আব্দুস সাত্তারের সংসার। অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত পুরো সার্কাসের দেখভাল করতেন তিনি। এখন তার দুই ছেলে সার্কাসের দায়িত্বে রয়েছেন। এক ছেলে শাহিনুর রহমান ও তার আরেক ভাই মিলে অপর একটি সার্কাসের লাইসেন্স নিয়েছেন। সার্কাসটির নাম ‘দি রাজমনি’। বর্তমানে এটা চালুও রয়েছে।
এক পড়ন্ত বিকেলে মহাস্থানগড়ের ভিটায় বসে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় দি বুলবুল সার্কাসের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুস সাত্তারের ছেলে শাহিনুর রহমানের কাছ থেকে শোনা হয় ঐতিহ্যবাহী এ সার্কাসটির একাল-সেকালের গল্প।
শাহিনুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তিনি ২০১১ সালে বগুড়া থেকে লাইসেন্স নিয়ে দি রাজমনি সার্কাস প্রতিষ্ঠা করেন। দি বুলবুল সার্কাসের সঙ্গে যুক্ত হয় এই রাজমনি। নতুন যাত্রা মানেই কঠিন চ্যালেঞ্জ। বেশ সফল ভাবেই একযোগে চলছিলো দুইটি সার্কাস। কিন্তু ২০১৬ সালে দি বুলবুল সার্কাস বন্ধ হয়ে যায়। চলতে থাকে শুধু রাজমনি।
সার্কাস পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে সার্কাসটি লালমনিরহাটের মোঘলহাট এলাকায় রয়েছে। নানা চেষ্টা-তদবিরের পর মাত্র ১২ দিনের অনুমতি মিললেও কোনো স্থায়ী সমাধান মেলেনি।
দু’টো সার্কাসেই পৃথকভাবে হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভল্লুক, বানর, কুকুর, রাম ছাগল রয়েছে। রয়েছে খেলোয়াড়, শারীরিক কসরত প্রদর্শনকারীসহ ৭০ জন করে জনবল। শাহিনুর বলেন, আগেকার জামানায় সার্কাসই ছিলো গ্রাম বাংলার সুস্থ বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। মা-মেয়ে-ভাই-বোন অর্থাৎ পরিবারের সবাই মিলে সার্কাস দেখতে আসতেন। আমাদের সার্কাস দেখতে এখনও মানুষের আগের মতই ঢল নামে। তবে এখন যেন আগের মতো রমরমা ভাবটি নেই।
প্রায় এক যুগ আগেও ছিল সার্কাসের রমরমা জামানা। তখন অনুমতি পেতে কোন সমস্যা হতো না। সার্কাস চালানোতেও কোনো অতিরিক্ত ঝামেলা ছিলো না। আর এখন অনুমতি নিতে গেলে জঙ্গি হামলার ভয়, কোনো না কোনো পরীক্ষা অথবা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অযুহাত দেখিয়ে সংশ্লিষ্টরা সার্কাস চালানোর অনুমতি দিতে চান না।
তিনি জানান, তাদের দু’টি সার্কাসে প্রায় ৪২ ধরনের খেলা প্রদর্শন করা হয়। সময়ের ব্যবধানে দু’টো সার্কাস প্রতিষ্ঠা করতে প্রায় দুই কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়েছে। যোগ্যতা অনুযাইয়ী প্রত্যেকের পেছনে ৪০০-১৫০০ টাকা পারিশ্রমিক গুণতে হয়। এছাড়া খাওয়া দাওয়া তো রয়েছেই।
সার্কাস বন্ধ রাখলেও তিন বেলা খাওয়া, থাকার ব্যবস্থা, সাংসারিক ন্যূনতম খরচ দিতে হয় সবাইকে। জীবজন্তুর পেছনেও রয়েছে প্রচুর ব্যয়। ঠিকমত সার্কাস চালাতে না দেওয়ায় বর্তমানে আব্দুস সাত্তারের পরিবার ঋণগ্রস্ত।
তবে আশা হারাননি শাহিনুর। সুদিনের আশায় এখনও এ শিল্পের সঙ্গে নিজেদের জড়িত রেখেছেন। গ্রাম বাংলার বিনোদন হিসেবে পরিচিত সার্কাস শিল্প টিকিয়ে রাখতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
এমবিএইচ/এনএইচটি