ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

হাওরে ধান কাটার ধুম, তবুও আনন্দ নেই কৃষকের মনে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:১০, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
হাওরে ধান কাটার ধুম, তবুও আনন্দ নেই কৃষকের মনে হাওরে ধান কাটার ধুম, তবুও আনন্দ নেই কৃষকের মনে

কিশোরগঞ্জ: বৈশাখী ঝড় ও বন্যার আশংকা নিয়েই কিশোরগঞ্জের হাওরের মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় ধান কাটার ধুম পড়েছে। গত বছরের আগাম বন্যায় বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় এবার আগেই ঘরে ফসল তুলতে চাইছেন হাওরের কৃষকরা। তাই তারা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

ফসলহানির ভয়ে বাংলা বর্ষবরণের আনন্দ আর আগের মতো নেই। তারা সবকিছু ভুলে এখন ধান কাটায় ব্যস্ত।

উপজেলার গোপদীঘি ইউনিয়নের হাসানপুর এলাকার কৃষক আউয়াল বলেন, এখন আকাশের পানে চেয়ে থাকি কখন কালো মেঘ ভাসে। ভয় হয় কখন ঝড় আসে। সেই সঙ্গে বৃষ্টি ও শিলা পড়লে তো আর ফসলের রক্ষা নাই। তাই যেভাবেই হোক ধান কেটে গোলায় ভরতে হবে। আর তাই ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছি।  

একই উপজেলার গোপদীঘি গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদিরের এবার বোরো ধানের ফসল ভালো হয়েছে। আর তাই শ্রমিক নিয়ে ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। গত বছরের ফসলহানিতে এবার ধান চাষ করতে গিয়ে ঋণের বোঝা বেড়েছে। বোরো ধানের এই ফসলই এবার তার ভরসা।

আব্দুল কাদির বলেন, আগে বোরো ফসল ঘরে তুলতে হবে। পরে সারা বছরের খাওয়ার ধান রেখে বাকি ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এ চিন্তা নিয়ে ফসলের মাঠে-ময়দানে আছি। ফসল তলিয়ে যাবার ভয়েই এবারের বৈশাখের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে।

হাওরের ইটনা উপজেলায়ও ধান কাটা শুরু হয়েছে। হাওরের জমিতে সোনালী ধানের এ মহাসমারোহ যেনো কৃষকের মুখে সোনালী হাসির ঝিলিক নিয়ে এসেছে। মহা-আনন্দে তাই কৃষকরাও। ধান কেটে মাথায় করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক।

এই উপজেলার বড়হাটি গ্রামের কৃষক আবু ছালেক এবার ২০ একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ফলনও ভালো। ইতিমধ্যে তিনি ৩ একর জমির ধান ঘরে তুলেছেন।

হাওরের জমিতে সোনালী ধানের এ মহাসমারোহ যেনো কৃষকের মুখে সোনালী হাসির ঝিলিক নিয়ে এসেছে

কৃষক আবু ছালেক বলেন, বাকি ধান কেটে ঘরে তুলতে চিন্তায় আছি। ঝড়-তুফান হলে উপায় নাই, ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। আর তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসলের মাঠে কাজ করছি। এবার নববর্ষ ও পহেলা বৈশাখের আনন্দ নেই।  

ওই এলাকার সাত্তার মিয়া বলেন, গত বছরের আগাম বন্যায় তার সব বোরো ফসল নষ্ট হয়েছে। এবার যতটুকু বোরো ধান লাগিয়েছি তার ফলন ভালো হয়েছে। ভালোভাবে ঘরে তুলতে পারলেই জান বাঁচবে। আমাদের তো আনন্দ নাই। এবার ফসল নষ্ট হলে ঋণের বোঝা বাড়বে, আর না খেয়ে উপোস থাকতে হবে।  

আগের মতো ধান বিক্রি করে পরিবারের ছেলে-মেয়েদের জন্য জামা কাপড় কিনতে পারবো না। এবারের পহেলা বৈশাখ তাই নিরানন্দে কাটবে, বলেন সাত্তার।  

হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে ধানকাটা শুরু হলেও আতঙ্ক বিরাজ করছে কৃষকের মাঝে। গেলো সপ্তাহে বৃষ্টির সঙ্গে শিলা হওয়ায় কিছু এলাকায় বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আর তাই এলাকার কৃষকরাও আগে ভাগে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত।  

উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আদমপুর ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ও স্থানীয় কৃষক মনমোহন দাস বলেন, এবার বোরো ফসল ভালো হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে ফসল নিয়ে শঙ্কায় আছি। এবার ফসল ঘরে তুলতে না পারলে কৃষকের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। গেলো বছরের আগাম বন্যায় কৃষক সর্বশান্ত হয়েছে। একে তো ঋণের বোঝা আবার ফসল না পেলে খাবে কী? এভাবে কৃষক বাঁচবে না।  

তিনি বলেন, আগে পহেলা বৈশাখ এলে কৃষক আনন্দে কাটাতো। ধান বিক্রি করে বৈশাখী মেলায় যেতো। কয়েক বছর ধরে বোরো ফসল মার খাওয়ায় কৃষকের মনে আনন্দ নেই।
 
আস্তে আস্তে হাওর অঞ্চলের পহেলা বৈশাখ সাদামাটা হয়ে গেছে, এমনটাই আক্ষেপ করে বলেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৬১০ ঘন্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
এমআইএইচ/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।