বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, শেষ সময়ে বেশ কর্মব্যস্ততায় সময় পার করছেন মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত চারুকলার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিল্পীরা।
মুখোশ তৈরি, মাটির সরা অঙ্কন, জলরঙের চিত্রকর্ম, পেপার কাটিং মাস্ক (কাগজের উপর মাটির মুখোশ) ও শেষ না হওয়া কয়েকটি বড় কাঠামো তৈরিতে এসময় ব্যস্ত ছিলেন প্রায় সবাই।
শেষ সময়ের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা নিয়ে কথা হয় চারুকলার শিক্ষার্থী শাশ্বতী মন্ডলের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে দীর্ঘ একটা ভাটা পড়েছে কাজে। তবে এখন সবাই মিলে কাজগুলো গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। খুব বেশি কাজ নেই, তবে যেটুকু আছে সেটুকুও খুব কম নয়। এছাড়া গত রাতের ঝড়-বৃষ্টিতে কাঠামোগুলোর কিছু ক্ষতি হয়েছে। ঠিক করা হচ্ছে সেগুলোও। আর ছোট ছোট কিছু কাজ তো আছেই। সব মিলিয়ে এখনো বেশ সময় দিতে আমাদের।
জয়নুল গ্যালারিতে কাগজের তৈরি পেঁচা, বাঘ ও পুতুলের মুখোশে রং লাগাচ্ছিলেন চারুকলার শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খলিল আসমানী। তিনি বলেন, ক্ষতির কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে আমরা সবাই চেষ্টা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব কাজ গুছিয়ে নেওয়ার। মুখোশ তৈরির কাজগুলো প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু রঙের কাজটা বাকি। সবাই মিলে সেগুলো করছি, আশা করি খুব দ্রুতই আমরা তা শেষ করতে পারবো।
এদিকে চারুকলার কাজের অগ্রগতির পাশাপাশি লক্ষ্য করা গেছে শিল্পকর্মের ক্রেতা সমাগমও। মঙ্গল শোভাযাত্রার ফান্ড কালেকশনের প্রধান অংশ হলো শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিল্পীদের শিল্পকর্ম বিক্রি। গত তিন চারদিন যেখানে কোনো ক্রেতাই আসেনি, সেখানে আজ সকাল থেকেই ক্রেতার ভিড় ছিল বলে জানালেন দায়িত্বরত বিক্রয়কর্মী ইতি রাজবংশী।
বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আন্দোলনের ভীতিটা কাটিয়ে লোক আসতে শুরু করেছে, যদিও তা আগের তুলনায় কম। গত কয়েকদিন যেখানে কেউই আসেননি, সেখানে সকাল থেকেই বেশ ভালো রকমের বিক্রি হচ্ছে। যারা আসছেন, তাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। কিনছেন নিজেদের পছন্দমতো শিল্পকর্মগুলো।
মঙ্গল শোভাযাত্রার এবারের স্লোগান নেওয়া হয়েছে মরমি বাউল সাধক সাঁইজি লালন শাহ থেকে। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ প্রতিপাদ্যে এবার নববর্ষে গাওয়া হবে আদর্শ মানুষ তৈরির জয়গান। পাশাপাশি উজ্জীবিত সূর্যের আলোতে আলোকিত করা হবে সবাইকে। শান্তির প্রতীক পায়রার মাধ্যমে মানবতায় ছোঁয়ানো হবে শান্তির প্রলেপ। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় হাতি, বক, মাছ, পুতুল ও বাইসাইকেলের বড় কাঠামোর আগে দেখা যাবে এ দু’টি কাঠামো। আর এগুলো প্রান্তিক এলাকার কুমারদের ফোক মোটিফ কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বলে জানান চারুকলার শিক্ষার্থী ও শোভাযাত্রার সমন্বয়কারী শিমুল আহমেদ।
সার্বিক বিষয়ে কথা হয় শোভাযাত্রা ১৪২৫ এর কার্যক্রমের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও আয়োজক ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আফি আজাদের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়েও আমরা আমাদের মঙ্গল যাত্রার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি সঠিক সময়ের মধ্যেই পুরো কাজ সম্পন্ন করে সবাই মিলে প্রাণের এ আয়োজন উদযাপন করবো।
এবারে শোভাযাত্রার সবার আগে কোন মোটিফ থাকবে, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। শিক্ষকরা কথা বলে এটি নির্ধারণ করবেন। তবে উজ্জীবিত সূর্য বা শান্তির প্রতীক পায়রা সবার আগে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া অনেকেই সোনার হরিণের কথা উল্লেখ করলেও এ ধরনের কোনো মোটিফ এবারের শোভাযাত্রায় থাকছে না। সব মিলিয়ে ৮টি বা ৯টি বড় কাঠামো দেখা যাবে ১৪২৫ বরণের আয়োজনে।
বৈশাখ বরণে যাবতীয় বাধা ভুলে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন চারুকলার সবাই। এ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থী অনাদীনি মগ্ন বলেন, আমরা সবার জন্য এ আয়োজন করছি নিজেদের নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য। আমরা মনে করি মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের জীবনে মঙ্গল বয়ে আনবে। সে সুবাদেই সবাইকে আমন্ত্রণ জানাবো এ মঙ্গলযজ্ঞে অংশগ্রহণের জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ০২২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
এইচএমএস/এএ