ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

আন্দোলনে থমকে গেছে মঙ্গল শোভাযাত্রার কার্যক্রম

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩:৫৯, এপ্রিল ১১, ২০১৮
আন্দোলনে থমকে গেছে মঙ্গল শোভাযাত্রার কার্যক্রম চারুকলায় মঙ্গলশোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে ভাটা/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে রং-তুলি আর বিভিন্ন মোটিফ তৈরির কাজ নিয়ে বেশ ভালোরকম ব্যস্ত সময় পার করছিলেন শিল্পীরা। শেষ সময়ের কাজে একটু দম নেওয়ারও যেন সুযোগ ছিল না তাদের। তবে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে হঠাৎ করেই যেন ছেদ পড়লো তাতে।

গত তিনদিন (রোববার, সোম ও মঙ্গলবার) চারুকলা প্রাঙ্গণে পা পড়েনি শিল্পীদের। থেমে আছে প্রায় সব কাজ।

এমনকি আন্দোলনে হামলার আতঙ্কে চারুকলায় পা বাড়াচ্ছেন না  সাধারণ মানুষও। ফলে বিক্রি বন্ধে ভাটা পড়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার ফান্ড কালেকশনে।

মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সকালে চারুকলা ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য দিন যেখানে শতশত শিক্ষার্থী মঙ্গল শোভাযাত্রার কর্মযজ্ঞে অংশ নেন, সেখানে এখন হাতেগোনা কয়েকজন আসছেন শুধু। এমনকি ক্লাসে আসতেও ভয় পাচ্ছেন অনেকে। গুছিয়ে নেয়া হয়েছে চিত্রকর্ম, মুখোশ আর বিভিন্ন মোটিফ বিক্রির কার্যক্রম। আন্দোলনের রেশ পড়েছে মাসকটগুলোতেও।

এ ব্যাপারে বাংলানিউজের কথা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৪২৫ এর কার্যক্রমের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আফি আজাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আন্দোলনে বেশ ক্ষতি হয়েছে এবার। ফান্ড কালেকশনের জন্য বিক্রিও বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্পীরা আসছেন না বললেই চলে, ফলে থমকে গেছে কার্যক্রম।

অনেকেই অভিযোগ করেছেন রবিবার মধ্যরাতে আন্দোলনকারীরা চারুকলায় প্রবেশ করে ভাঙচুর করেছে শোভাযাত্রার বড় বড় মাসকট। কয়েকটি মাসকট পোড়ানোও হয়েছে। তবে তাতে সম্পূর্ণ সায় দেননি এ সমন্বয়কারী।

তিনি বলেন, মাসকট পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটি সত্য নয়। তবে হামলাকারীরা মাসকট তৈরির জন্য যে বাঁশ এবং কাঠ ছিলো, তা সবগুলোই নিয়ে গেছে। কয়েকটি থেকে কিছু বাঁশ ও কাঠ টেনে বের করে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মুখোশ, মাটির সরা এগুলো আগের মতোই আছে। তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। আশা করছি একটু পরিশ্রম করলে খুব দ্রুতই এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।

এবারে শোভাযাত্রায় পেপার কাটিং মাস্ক (কাগজের উপর মাটির মুখোশ) হিসেবে দেখা যাবে পেঁচা ও বাঘের মুখ। পেপার ম্যাশ (কাগজের মুখোশ) হিসেবে থাকছে রাজা, রাণী, টেপা পুতুল আর সূর্য। এছাড়া প্রাথমিকভাবে মাসকট বা বড় বড় হাতি-ঘোড়া-বাঘ-পুতুলের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯টি। তবে আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে এ সংখ্যা কমবেশি হতে পারে বলে আগে থেকেই জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এখন আবহাওয়ার পরিবর্তে আন্দোলনের কারণেই যেন এ সংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, এখন যারা আসছেন, তারা চেষ্টা করছেন শেষ সময়ের কাজটুকু গুছিয়ে নেওয়ার। মাসকটগুলো তৈরিতেও পুরোদস্তুর সময় পার করছেন অনেকে। বড় বড় শিল্পীরা কয়েকজন মিলেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বড় বড় মসকট তৈরির কাজকে। দিনরাত এক করে তারা এখন নিজেদের আনন্দটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়েই বেশি ব্যস্ত।

সার্বিক বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন ও জাতীয় বৈশাখ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক নিসার হোসেন জানান, পহেলা বৈশাখর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ব্যাহত করার একটি চক্রান্ত ছিল এটি। তবে আমরা সবাইকে আহ্বান জানাবো, আমাদের এ মঙ্গল শোভাযাত্রা যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়। সেজন্য আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন, আমাদের সহযোগিতা করুন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৮
এইচএমএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।