ঢাকা, বুধবার, ৬ কার্তিক ১৪৩২, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধনের দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩৮, অক্টোবর ২২, ২০২৫
অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধনের দাবি

হৃদরোগ, ক্যানসারসহ অসংক্রামক রোগ এবং শিশুদের তামাকজনিত ঝুঁকি প্রতিরোধে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের সারি জানিয়েছেন তরুণ চিকিৎসকরা।  

বর্তমান আইন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এটি সংশোধন না হলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও এসডিজি অর্জনের অগ্রগতি ব্যাহত হবে বলেও তারা জানান।

 

বুধবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‌‘অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও তরুণদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা: তরুণ চিকিৎসকদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার থেকে এ দাবি জানানো হয়।

প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি ডা. রামিসা ফারিহার উপস্থাপনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ডা. ফারজানা রহমান মুনমুন।

সেমিনার মূল প্রবন্ধে বলা হয়, গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো সার্ভে (২০১৩) অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩-১৫ বছর বয়সী ছেলেদের ২ দশমিক ২ শতাংশ এবং মেয়েদের ২ দশমিক ৮ শতাংশ ধূমপান করে। একই বয়সী ছেলেদের ৬ দশমিক ২ শতাংশ ও মেয়েদের ২ দশমিক ৯ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে।  

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ পাবলিক স্থানে এবং ৩১ দশমিক ১ শতাংশ বাড়িতে পরোক্ষ ধুমপানের শিকার হন।

প্রবন্ধে আরও উল্লেখ করা হয়, বিশ্বজুড়ে কিশোরদের মধ্যে তামাক ও ই-সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। তামাক কোম্পানিগুলো তরুণদের লক্ষ্য করে ডিজিটাল মাধ্যমে আগ্রাসী বিপণন চালাচ্ছে, যা এই বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। তাই তরুণদের সুরক্ষায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, তামাক এমন এক নীরব ঘাতক, যা শুধু ফুসফুস নয় হৃদযন্ত্র ও মস্তিস্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রতিদিন শত শত মানুষ অকালমৃত্যুর শিকার হচ্ছে তামাকজনিত রোগে, যা আমাদের মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বড় অন্তরায়। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন যুগোপযোগীভাবে সংশোধন করা জরুরি। এজন্য আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করব, যাতে আইনটি দ্রুত সংশোধন হয়।

সেমিনারে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, তামাকের ধোঁয়া শুধু ধূমপায়ীকেই নয় আশপাশের মানুষকেও গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পরোক্ষ ধূমপান শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। দেশে ১৫ বছরের নিচে ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন রোগে ভুগছে। এই বিপদ থেকে সুরক্ষা পেতে পাবলিক প্লেস ও পরিবহন থেকে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান (ডিএসএ)’ বাতিল করা জরুরি। পাশাপাশি বিক্রয়স্থলে তামাকপণ্যের প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে, যাতে শিশু-কিশোররা এসব দেখে তামাকের প্রতি আকৃষ্ট না হয়। এ ছাড়া তামাক কোম্পানির তথাকথিত সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন, কারণ এসব কার্যক্রম তরুণদের প্রলুব্ধ করে। অধূমপায়ী ও তরুণদের সুরক্ষায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধন করা এখন সময়ের দাবি।  

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগসহ নানা অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ তামাক। বর্তমানে দেশে প্রায় তিন কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন এবং প্রতি ১০ জনের মধ্যে চারজন পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। প্রতিবছর তামাকজনিত কারণে এক লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ অকালে মারা যায়। তরুণ প্রজন্মকে এই বিপদ থেকে রক্ষায় প্রস্তাবিত আইন সংশোধনী দ্রুত পাস করা জরুরি।

সেমিনারে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছয়টি নীতিগত সুপারিশ তুলে ধরা হয় সব পাবলিক স্থান ও গণপরিবহনে ধূমপানের নির্ধারিত স্থান বাতিল, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ, শিশু-কিশোরদের সুরক্ষায় ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ, তামাকপণ্যের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) শেখ মোমেনা মনি, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আখতারউজ-জামান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপদেষ্টা মো. নাইমুল আজম খান, প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর ডা. অরুনা সরকার, সিনিয়র কমিউনিকেশন অফিসার আবু জাফর এবং তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।  

আরকেআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।