ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ আশ্বিন ১৪৩২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

ডিভোর্সের পর ভয় দেখিয়ে রাত্রিযাপন, সাবেক স্বামীকে হত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৫২, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫
ডিভোর্সের পর ভয় দেখিয়ে রাত্রিযাপন, সাবেক স্বামীকে হত্যা র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।

ঢাকা: কুমিল্লার লালমাইয়ে ডিভোর্সের পরও ভয়ভীতি দেখিয়ে সাবেক স্ত্রীকে রাত্রিযাপনে বাধ্য করতেন দুলাল হোসেন (৩৫) নামে এক যুবক। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে বর্তমান স্বামী ও বাবা-মাকে নিয়ে সাবেক স্বামীকে হত্যা করেন ফাতেমা আক্তার সিনথিয়া।

পরে লাশ গুম করতে ফেলে রাখা হয় রেললাইনের পাশে। ক্লু-লেস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গ্রেপ্তাররা হলেন, নিহত দুলালের সাবেক স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সিনথিয়া (১৯), তার বর্তমান স্বামী আবুল হাসেম (৩৪), তার বাবা মো. ফারুক (৪৫), মা মরিয়ম (৩৭), তার স্বামীর বন্ধু মো. মফিজুল ইসলাম (৪৫), তাজুল ইসলাম (৪২) ও রুবেল আহাম্মেদ (৩৯)।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।

তিনি বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল এলাকায় রেললাইনের পাশ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে লাকসাম রেলওয়ে পুলিশ। নিহত অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের মাথার ডান পাশে রক্তাক্ত জখম এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। পরে যুবকের পরিচয় শনাক্ত হয়। তিনি কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার ভল্লবপুর গ্রামের জব্বর মালের ছেলে দুলাল হোসেন।

তিনি আরও জানান, র‍্যাব ১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল নিজস্ব গোয়েন্দা নজরদারি ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ১৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার ও লাকসাম থানা এবং ঢাকা জেলার যাত্রাবাড়ী খানা এলাকায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও আসামিদের ভাষ্যমতে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামি ফাতেমা আক্তার সিনথিয়ার সঙ্গে প্রায় ছয় মাস আগে নিহত দুলালের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তারা নিমসার বাজারে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে দুলাল সিনথিয়াকে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। এরই মধ্যে ফাতেমা আক্তার সিনথিয়া গ্রেপ্তারকৃত আরেক আসামি দুবাই প্রবাসী আবুল হাসেমের সঙ্গে ইমুর মাধ্যমে পরিচয় হয় এবং পরিচয়ের একপর্যায়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরে স্বামী দুলালকে ডিভোর্স দিয়ে সিনথিয়া মায়ের বাড়িতে চলে যান। এর মধ্যে প্রবাসী আবুল হাসেম দুই মাস আগে দেশের তিন-চার দিনের মধ্যে সিনথিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়। কিন্তু দুলাল ডিভোর্স না মেনে প্রায় সময় হাসেমের অনুপস্থিতিতে জোরপূর্বক বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে সিনথিয়ার বাসায় গিয়ে রাত্রিযাপন করতেন। প্রথমে বিষয়টি সিনথিয়া গোপন করিলে পরে বাধ্য হয়ে তার বর্তমান স্বামী হাসেমকে জানান। এর পর থেকে সিনথিয়া, তার বর্তমান স্বামী হাসেম, সিনথিয়ার বাবা-মা মিলে দুলালকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

তিনি  জানান, ঘটনার দিন নিহত দুলাল সিনথিয়ার বাসায় যান এবং সিনথিয়া তার বর্তমান স্বামী হাসেমের কথামতো জুসের সঙ্গে চারটি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। ঘুমের ওষুধ মেশানো জুস খেয়ে দুলাল ঘুমিয়ে পড়লে গ্রেপ্তার সব আসামি মিলে দুলালের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে লাশ গুম করার জন্য গ্রেপ্তারকৃত আরেক আসামি ড্রাইভার রুবেল গাড়ি করে লাশ লালমাই রেললাইনের পাশে রেখে আসেন।

গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‌্যাব১১ এর অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।

এসসি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।