ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ ভাদ্র ১৪৩২, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ২৪ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

শব্দদূষণ রোধে বসুন্ধরায় সচেতনতামূলক র‍্যালি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩৯, আগস্ট ১৯, ২০২৫
শব্দদূষণ রোধে বসুন্ধরায় সচেতনতামূলক র‍্যালি শব্দদূষণ রোধে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সচেতনতামূলক র‌্যালি। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: শব্দদূষণ একটি নীরব ঘাতক। এটি প্রতিনিয়ত মানুষকে শারীরিকভাবে অসুস্থ করার পাশাপাশি মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

তাই শব্দদূষণ রোধে এবং এ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি সচেতনতামূলক র‌্যালি।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লক বড় মসজিদের সামনে এ র‌্যালির আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোয়াইট অ্যান্ড ক্লিন। এতে কোয়াইট অ্যান্ড ক্লিনের সদস্যদের পাশাপাশি বসুন্ধরা হাউজিং, আপন ফ্যামিলি মার্ট, জেসিএক্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, দোয়েল ডেভেলপমেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেড, এভারকেয়ার হাসপাতাল ও ওয়ালটন গ্রুপের সদস্যরাও অংশ নেন।

র‌্যালিটি বড় মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে আপন ফ্যামিলি মার্ট হয়ে ক্যাফে লিও তে এসে শেষ হয়। এ সময় র‌্যালিতে অংশ নেওয়াদের হাতে শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার দেখা যায়।

র‌্যালির শুরুতে এভারকেয়ার হাসপাতালের অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি বিভাগের ক্লিনিক্যাল অ্যাসোসিয়েট ডা. নাজিয়া জিহান বলেন, সুস্থ একটি গর্ভধারণ মানেই হচ্ছে সুস্থ একটি ভবিষ্যৎ, সুন্দর একটি জাতি। শব্দদূষণ গর্ভধারণে মায়েদের যেমন ক্ষতি করছে, তেমনি গর্ভের বাচ্চার জন্যও এটি খুবই ক্ষতিকর। গর্ভাবস্থায় শব্দদূষণ মায়েদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন অনেক বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে তার শরীরে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস, জেস্টেশনাল হাইপারটেনশন এগুলো বাসা বাঁধছে। পরবর্তীতে বাচ্চা প্রসবের সময় কম ওজনের শিশুর জন্ম হচ্ছে, অকাল প্রসব হচ্ছে। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন-চার মাসের ভেতর মায়ের পেটেই বাচ্চা কানের সবকিছু তৈরি হয়। এ সময় যে মা শব্দদূষণের শিকার হবে, পরবর্তীতে তার বাচ্চা বধির হতে পারে, কানে শোনার গঠন তৈরিতে দেরি হতে পারে। সুতরাং, শব্দদূষণের ক্ষেত্রগুলোতে সর্বক্ষণ হর্ন ব্যবহার করা যাবে না, করলেও একদম কম হর্ন ব্যবহার করতে হবে, কনস্ট্রাকশনের ক্ষেত্রে কম শব্দদূষণ হয় এমন মেশিন ব্যবহার করতে হবে। মায়েদেরও গর্ভধারণের সময় কনসার্ট ও হেডফোনে উচ্চ শব্দে গান শোনা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর যেসব শব্দদূষণ এড়ানো যাবে না, সেক্ষেত্রে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মঞ্জুরে মোর্শেদ বলেন, আমাদের হর্ন দেওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের মধ্যে এমন একটি মানসিক প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে, কার গাড়ির হর্ন কত বেশি হবে। এমন একটি ধারণা, গাড়ির হর্ন শক্তিশালী হলে দ্রুত সাইড কেটে চলে যেতে পারবে। এগুলো আমাদের পরিহার করতে হবে। একইসঙ্গে হর্ন যাতে বাজাতে না হয়, সেজন্য কী ধরনের ট্রাফিক সিস্টেম প্রণয়ন করা যায়, সেদিকেও আমাদের মনোযোগী হতে হবে। বাইরের দেশগুলোতে চার রাস্তার মোড়ে আয়না বসানো হয়, যাতে চালকরা দূর থেকেই দেখতে পারে কোনো পাশ দিয়ে গাড়ি আসছে।

শব্দ দূষণ রোধে আয়োজিত এ র‌্যালির প্রশংসা করে তিনি আরও বলেন, দেশের যেকোনো অগ্রগতিতে বসুন্ধরা সব সময় পথ প্রদর্শক। বসুন্ধরা যদি তাদের আবাসিক এলাকায় পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য জেব্রাক্রসিং বা বিদেশের মতো বাটন সিস্টেম করে উদাহরণ সৃষ্টি করে, তাহলে বসুন্ধরার ভেতর তো শব্দ দূষণ কমবেই, পাশাপাশি ঢাকার অন্যান্য এলাকা ও সরকারের জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

র‌্যালির আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের মানুষের সচেতন হওয়া খুবই জরুরি। আমরা পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণের মধ্যে বেঁচে আছি। আমরা যদি নিজেরা সচেতন না হই, তাহলে দূষিত সমাজ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো না। যারা আজকে শব্দদূষণ নিয়ে এ র‌্যালি আয়োজন করছে, তারা তাদের বোধ থেকে এ আয়োজন করেছে। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। আর আমরা বসুন্ধরাকে ভিন্নভাবে দেখতে চাই। ঢাকার অন্যান্য সোসাইটির চেয়ে বসুন্ধরা অনেক ভালো, অনেক সুন্দর। এখানে চমৎকার সিকিউরিটির ব্যবস্থা আছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া বাস-ট্রাকের মতো অন্যান্য গাড়ি এখানে চলে না। ফলে এখানে দূষণ সৃষ্টির সুযোগ অনেক কম। আমরা যদি সচেতন হই, তাহলে দূষণ আরও কম হবে।

দোয়েল ডেভেলপমেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম বলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা হচ্ছে ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে গোছানো, সাজানো সুন্দর একটি এলাকা। সমস্যা হচ্ছে পরিবেশ নিয়ে। আমাদের এত সুন্দর এলাকার মধ্যে অযথা হর্ন বাজানো হয়। এ ধরনের কাজ যাতে না হয়, সেজন্য আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।

কোয়াইট অ্যান্ড ক্লিনের হেড অব অ্যাডমিন মশিকুর রহমান বলেন, শব্দ দূষণে ঢাকা শহর পৃথিবীর মধ্যে এক নম্বরে আছে। আমাদের শহর যদি আমরা ঠিক না করি, তাহলে কেউই আমাদের এ শহর ঠিক করার জন্য আসবে না। বসুন্ধরা আমাদের নিজস্ব এলাকা, তাই আমরা শব্দ দূষণ রোধে সচেতনতা তৈরির কার্যক্রম এখান থেকে শুরু করলাম। আস্তে আস্তে আমরা অন্যান্য আবাসিক এলাকাগুলোতে যাবো। বসুন্ধরা এলাকায় যারা থাকেন, তাদের সবাইকে আমি অনুরোধ জানাবো, গাড়ি চালানোর সময় যতটা সম্ভব হর্ন কম বাজানোর জন্য।

বসুন্ধরা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোক্তার হোসেন চৌধুরী বলেন, সুস্থ দেহ, সুস্থ মনের জন্য যে পরিবেশ দরকার, সেই পরিবেশের একটি বড় বাধা শব্দ দূষণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে, সর্বোচ্চ নীরব ঘাতকগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শব্দ দূষণ। এ দূষণ প্রতিরোধে সময়পযোগী এ র‌্যালি আয়োজন করার জন্য আমি কোয়াইট অ্যান্ড ক্লিনকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।

এসসি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ