ঢাকা, সোমবার, ৩ ভাদ্র ১৪৩২, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

উচ্চশিক্ষাবিষয়ক সেমিনারে বক্তারা

ভাষা শিখলেই জাপান যাওয়ার সুযোগ আসছে

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৪১, আগস্ট ১৮, ২০২৫
ভাষা শিখলেই জাপান যাওয়ার সুযোগ আসছে সেমিনারে কথা বলছেন বক্তারা/ ছবি: জি এম মুজিবুর

বছরে এক লাখ কর্মীকে জাপানে পাঠাতে চায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পাবেন এই সুযোগ।

এক্ষেত্রে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে স্টুডেন্ট মাইগ্রেশন সম্ভব। তবে এজন্য শিখতে হবে জাপানি ভাষা। আর কারিগরি দক্ষতা অর্জন করলেই ব্লু-কালার হিসেবে নয়; হোয়াইট কালার জব পাওয়া কঠিন কিছু নয়। এজন্য দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক ঋণ সুবিধা বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

সোমবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় আর্কাইভস ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘জাপানে উচ্চশিক্ষা ও কর্মী প্রেরণের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে এই প্রত্যাশার কথা জানানো হয়।  

অ্যাসোসিয়েশন অব জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটস ইন বাংলাদেশের (আজলিব) উদ্যোগে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারে জানানো হয়, দেশের জন্য জাপানের শ্রম মার্কেট উন্মুক্ত হচ্ছে। শ্রমিকদের ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা ঋণ দেবে ব্যাংক। প্রতিবছর ১ লাখ শ্রমিক জাপানে পাঠানোর উদ্যোগ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের জাপান সেলের। তাছাড়া যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি ৬ মাসে লোক পাঠাতে পারবে না তাদের এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল হবে।

সেমিনারে দক্ষতার ওপর জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, দেশের লোকজন দক্ষ না হওয়ায় তারা বাইরে গিয়ে কম বেতনে কাজ করেন। এতে তারা নিজেদের খরচ চালাতে হিমশিম খান। ফলে তারা বাধ্য হয়ে বাড়তি আয়ের জন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। এসব নিয়ে সংশিষ্ট দেশগুলো আমাদের সঙ্গে যখন কথা বলে আমরা তখন বিষয়টিতে খুব একটা গুরুত্ব দেই না। এতে বিদেশে কর্মী প্রেরণে আমারা অনেক পিছিয়ে পড়ি। নেপাল এখন কর্মী প্রেরণে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে।

লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, আমি সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের মন্ত্রীকে ফোন করি। তিনি আমাকে বলেন, আপনাদের দেশ থেকে যারা আসেন, তারা অনেক বেশি অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো এক দেশের একজন মন্ত্রী বন্দিদের ২৫ শতাংশ বাংলাদেশের বলে আমাকে জানিয়েছেন।  

সেমিনারটির সভাপতিত্ব করেন আজলিবের সভাপতি মো. ওয়াকিল আহেমদ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম।

টপ জে বাংলাদেশ ও বিডিজবস'র সহযোগিতায় সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপান সেলের প্রধান শহীদুল ইসলাম চৌধুরী, পলিসি অ্যাডভাইজার জিয়া আহসান, বিডার হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রুচি, বিডি জবসের সিইও ফাহিম মাশরুর।

এ ছাড়া ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া।

বিশেষ অতিথি গালিব শাহরিয়ার বলেন, ২০১৮ সাল আজলিবের যাত্রা শুরু হলেও সরকার আমাদের সহযোগী ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি আমরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করি। আমরা চাই, সরকার আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করুক।

ওয়াকিল আহমেদ বলেন, দুই দশক ধরে আমরা জাপানে কাজ করি। দেশটিতে বাংলাদেশিদের পাঠানো নিয়ে কোনো অভিভাবক পাচ্ছিলাম না। পরে আমরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করি।

অনুষ্ঠানে বিডিজবসের সিইও ফাহিম মাশরুর বলেন, বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট ভিসায় গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে তাদের জন্য সরকারি বেসরকারি প্রতিটি ব্যাংক থেকে ৫-৭ লাখ টাকার মতো ঋণ দেওয়া উচিত। এতে জাপানে যেতে লোকজন আরও আগ্রহী হবে।

জাপান সেলের পলিসি অ্যাডভাইজার জিয়া আহসান বলেন, জাপানে শ্রমিক প্রেরণে আগে কাজ হয়নি। বর্তমান সরকার জাপানে জনবল পাঠানোর জন্য মার্কেটিংয়ের কাজ করছে। ফলাফল হিসেবে নতুন করে ৪০টি কোম্পানি শ্রমিক নিতে আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।

জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী বলেন, যারা পরীক্ষা দিচ্ছেন তারা যেন পাশ করেন। তাহলে আমাদের সিট খালি থাকবে না। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেলে আরও আগ্রহী হবে। জাপান সরকারের সঙ্গে কথা বলে আমরা শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পরিশোধ সহজ করেছি। তারা আগামী বছর ১০ হাজার শিক্ষার্থী নেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

এর আগে বিকেল ৪টায় জাতীয় আর্কাইভ অডিটোরিয়ামে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর আগে জুলাই আন্দোলনে হতাহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আজলিবের ২০০ প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। বাংলাদেশে জাপানি ভাষা শিক্ষাদানকারী স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকমণ্ডলী ও পরিচালকরা।

এনডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।