ঢাকা, বুধবার, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৮ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

মতবিনিময় সভা

এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সরকারের বিষয় নয়, প্রস্তুতি দরকার এখনই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৪, আগস্ট ১৩, ২০২৫
এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সরকারের বিষয় নয়, প্রস্তুতি দরকার এখনই নাগরিক উদ্যোগ আয়োজিত মতবিনিময় সভা

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য যে প্রস্তুতি দরকার, বাংলাদেশ তা থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। উন্নয়নশীল দেশ হবার পর স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্যে প্রাপ্ত সুবিধা হারালে তা পুষিয়ে নিতে কী কী ধরনের কৌশল এখন নিতে হবে, সে ব্যাপারে এখনও কোনো সরকারি উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

বুধবার (১৩ আগস্ট) ঢাকায় পিআইবি’র কনফারেন্স রুমে নাগরিক উদ্যোগ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় আলোচকেরা এসব কথা বলেন।

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও পশুসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ড. মোশাহিদা সুলতানা, ডা. জাহেদ মাসুদ, গওহর নইম ওয়ারা ও সালাউদ্দিন বাবলু। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বরকত উল্লাহ মারুফ এবং বিভিন্ন কারিগরি বিষয় উপস্থাপন করেন সানিয়া রিড স্মিথ।



অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, সত্যি কথা বলতে বাংলাদেশ এখনও প্রস্তুত না। আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পরিসংখ্যান পেয়েছি। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গ্রাজুয়েশন করতে পারবে না। কিন্তু একটা প্রস্তুতিকালীন ব্যবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। গ্রাজুয়েশন বিলম্বিত করার অনুরোধ করা হবে কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, যে পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসেছে, তাতে তারা একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে পারত। দ্বিপাক্ষিক গোপন বাণিজ্য চুক্তিগুলো জনগণের সামনে প্রকাশ করার এমন একটা নজির তারা উপস্থাপন করতে পারত যে, বাংলাদেশে গোপন চুক্তি করার চর্চা বন্ধ হয়ে যেত।

সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপনে বরকত উল্লাহ মারুফ বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশ বা উন্নত দেশ হবার বিরোধী নই। কিন্তু, উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর ও বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, সে ব্যাপারে দেশের সকল অংশীজনের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি জাতীয় কৌশলপত্র তৈরি করতে হবে। অন্যথায় এই গ্রাজুয়েশন হবে আত্মঘাতী।

থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের গবেষক সানিয়া রিড স্মিথ বলেন, বাংলাদেশ গ্রাজুয়েশনের ফলে এলডিসি হিসেবে প্রাপ্ত সুবিধা হারানোর ক্ষতিপূরণ করতে দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু এর ফলে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে, কৃষকদের উচ্চমূল্যে বীজ ও সার কিনতে হবে, জনগণের চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে।

ড. মোশাহিদা সুলতানা বলেন, সরকারের একটা প্রবণতা হচ্ছে জাতীয় সক্ষমতা তৈরি না করে সস্তা আমদানি উৎসাহিত করা। আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো ছোটখাট কৌশলের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে স্থানীয় চাষিরা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জাহেদ মাসুদ বলেন, আমরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী হাজার বছরের চিকিৎসা জ্ঞান, ইনডিজিনাস নলেজ হারিয়ে ফেলছি, আর ক্রমাগত বাজার ভিত্তিক ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ফলে হয়ত তা আমাদের জন্য আরও বিপদ বয়ে আনবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নারী।

গবেষক নইম গওহর ওয়ারা বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশনে যাব কি যাব না, সেই সিদ্ধান্তের চেয়েও বড় প্রশ্ন, আমরা এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে আগ্রহী কি না। সামান্য নীতি ও কৌশলের অভাবে আমাদের মূল্যবান চামড়া সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আমরা গ্রাহ্যই করছি না।

মেধাস্বত্ব বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট তাসলিমা জাহান বলেন, আমাদের স্থানীয় আবিষ্কার বা পেটেন্ট এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। হাজার বছরের কৃষিজ্ঞানসহ বাংলাদেশের জনগণের অধিকার যে মেধা সম্পত্তি আছে, তা সুরক্ষা করার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। যা উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হলে হারিয়ে যেতে পারে।

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, আমরা বেসরকারিভাবে জনস্বার্থে এলডিসি গ্রাজুয়েশন পর্যবেক্ষণ করব। আমরা এ বিষয়ে গবেষণা করছি এবং প্রয়োজন হলে ইতিবাচক পরামর্শ দিতে আমরা প্রস্তুত।

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।