ঢাকা, রবিবার, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৫ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

‘অপূর্ণাঙ্গ’ জুলাই ঘোষণাপত্রে বাদ পড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত করার দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩০, আগস্ট ১০, ২০২৫
‘অপূর্ণাঙ্গ’ জুলাই ঘোষণাপত্রে বাদ পড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত করার দাবি শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নির্বাচনমুখী জুলাই ঘোষণাপত্র, শহীদদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: বাংলানিউজ

জুলাই ঘোষণাপত্রকে ‘অপূর্ণাঙ্গ, দুর্বল ও ফরমায়েশি’ বলে অভিহিত করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা। তারা মনে করেন, ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, ঘটনা ও বিষয় পরিকল্পিতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন সময়ের হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, ১৯৪৭ সালে প্রেক্ষাপটও এতে অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক বলে অভিমত তাদের।

শনিবার (৯ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে অরাজনৈতিক গবেষণামূলক সংগঠন ‘নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিস’ আয়োজিত ‘নির্বাচনমুখী জুলাই ঘোষণাপত্র, শহীদদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত তুলে ধরেন।

‘ইনকিলাব মঞ্চ’র মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী বলেন, ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ের চূড়ান্ত অর্জন আমাদের ১৯৪৭-এর আজাদী। এই আজাদীকে জুলাই ঘোষণাপত্রে উপনিবেশবিরোধী লড়াই বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৪৭-কে মার্ক করা হয়নি। অথচ এই ৪৭-ই হলো আমাদের রাষ্ট্র আকাঙ্ক্ষার প্রথম সফলতা। ৪৭-কে স্বীকৃতি দিতে হবে।  যেহেতু এখানে ৭৫-এর ৭ নভেম্বরের স্বীকৃতি আছে, এখানে ৯০-এর স্বীকৃতি আছে, এর সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক পিলখানা হত্যাকাণ্ড এবং শাপলা হত্যার স্বীকৃতি থাকতেই হবে।  

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে যে ঘোষণাপত্রটি দুর্বল হয়েছে, অপূর্ণাঙ্গ হয়েছে। শুধু তাই না, বরং বৈষম্যমূলক হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে উদ্ভূত একটা অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের মধ্যে আমরা বৈষম্যের ছাপ দেখেছি। ঘোষণাপত্র তৈরির প্রেক্ষাপটেও আমরা দেখেছি বৈষম্য করা হয়েছে। এখানে লিখিতভাবেই তারা জানিয়েছে যে ঘোষণাপত্রটি রচনার আগে তিনটি রাজনৈতিক দলের কাছে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। তো এখানে স্পষ্টত একটা বৈষম্য হয়েছে। কারণ এই তিনটি রাজনৈতিক দলই শুধু এই জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছে, বিষয়টা এমন নয়।  

ইসলামী ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগা বলেন, জুলাই-আগস্টে আমাদের চোখের সামনে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ জুলাই ঘোষণাপত্রের কোথাও গণহত্যার কথা উল্লেখ নেই। আমরা দেখতে পেলাম যে একটা ফরমায়েশি ঘোষণাপত্র হয়েছে। জুলাইয়ের এক দফা একদিনে আসেনি। এটার একটা ধারাবাহিকতা ছিল। সবাই জানে যে নয় দফা থেকে এক দফা হয়েছে। এই নয় দফার উল্লেখ কি কোথাও আছে ঘোষণাপত্রে? কোথাও নেই। নয় দফা তো একটা বড় বৈধতা। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈধতাকে তারা উপেক্ষা করেছে। এই নয় দফায় আসলে এক দফা নিহিত ছিল। কারণ হাসিনা নয় দফার কোনো দাবি মানতে পারেনি।  

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ রাশেদ খাঁন বলেন, আজকে একজন সচিবের বক্তব্য শুনলাম। তিনি বলছেন তার কাছে স্পষ্ট তথ্য রয়েছে—আটজন উপদেষ্টার দুর্নীতির তথ্য। আমি জানি না কতটুকু সত্য, কতটুকু মিথ্যা। তবে ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি একজন উপদেষ্টার এপিএসের দুর্নীতি এবং আরেকজন উপদেষ্টার দুজন পিএর দুর্নীতি। এমনকি আমাদের প্রধান উপদেষ্টাও কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টে (স্বার্থের দ্বন্দ্ব) জড়িয়ে পড়েছেন। জনশক্তি রপ্তানি কোম্পানি, স্টারলিংক, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার নামের মামলাগুলো তুলে নেওয়া—এ রকম আরও অনেকগুলো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টে তিনি জড়িয়েছেন। এই সরকারের কাছ থেকে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল যে বাংলাদেশকে তারা পরিবর্তন করে ফেলবে। কিন্তু এক বছরে শুধু উপদেষ্টা পরিষদ ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে, আমার-আপনার ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান (বীর প্রতীক) বলেন, বিপ্লব করেছে ছাত্ররা। কিন্তু সেই ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা না করে কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলেচনা করে ঘোষণাপত্র তৈরি করা  হয়েছে। এটা কি এক ধরনের বৈষম্য নয়?

প্রধান উপদেষ্টাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আপনার শাসন ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। আপনার আশপাশের মানুষগুলো পরিবর্তন করুন। উপদেষ্টারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। সেনাবাহিনীকে ভয় পাওয়া যাবে না।

সঠিক শাসন ব্যবস্থায় দেশ চালাতে না পরলে চলে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।

সেনাপ্রধানকে উদ্দেশ্য করে হাসিনুর রহমান বলেন, আপনি প্রজাতন্ত্রের চাকর। উপদেষ্টা যা বলবেন তা করতে হবে। সেনাবাহিনীর বদনাম করা যাবে না। সরকারকে সাহায্য করুন। আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ চাই। ভারতের আধিপত্যহীন বাংলাদেশ চাই। আওয়ামী লীগকে কখনো বাংলাদেশের মাটিতে দেখতে চাই না। আমাদের বিপ্লব শেষ হয়নি, তা চলমান।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম জিয়াউল হাসান বলেন, রাজনীতিবিদরা জনগণের কল্যাণে কাজ করেন না, কথা দিয়ে রাখেন না বলেই জনগণ রাজনীতিবিদদের বিশ্বাস করে না। এক বছর চলে গেল, এখনো দেশের সংস্কার চোখে পড়ছে না। আমি মনে করি রাজাকারের চেয়ে বেশি দোষ আওয়ামী রাজনীতিবিদদের। তারা আমাদের স্বপ্ন দেখিয়ে স্বপ্ন নষ্ট করেছে। তারা আজ দেশের কল্যাণে, জনগণের জন্য ভালো কাজ করলে এই দেশ ধ্বংস হতো না।  

অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মো. জাকারিয়া হোসাইন বলেন, জুলাই বিপ্লবের পরেও ফ্যাসিস্টরা এখনো যার যার অবস্থান পাকাপোক্ত করে রেখেছে। তাদের এখনো অপসারণ করা হয়নি। জুলাই বিপ্লবের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে হাসিনার সরকার ১৫ বছর লালন-পালন করে যে সেটআপ রেখে গেছে তা পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ড. ইউনূস শক্ত হাতে তা পরিবর্তন করতে পারেননি। যার ফলশ্রুতিতে যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়েছে, সেখানে জুলাইযোদ্ধাদের, এদেশের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এবং চেতনার প্রতিফলন  হয়নি।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপার) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, কার লক্ষ্যে, কার উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে শাহবাগের ইতিহাস, পিলখানার গণহত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যাকে বাদ দেওয়া হয়েছে? জুলাই আন্দোলনে শুধু ছাত্ররাই ছিলেন না, সেখানে শিক্ষক সম্প্রদায়, আলেম-ওলামা সম্প্রদায়ও ছিলেন। যারা কোনো চাহিদা ছাড়া, দেশের স্বার্থে যুদ্ধ করলেন, তাদের নাম বাদ পড়লো কেন? 

তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এখনো সময় আছে, সুযোগ আছে, সবার সঙ্গে আলোচনা করে এই ঘোষণাপত্রটাকে পূর্ণাঙ্গ রূপে সবার সামনে উপস্থাপন করতে হবে। এই ঘোষণাপত্র এবং সনদকে সংবিধানে সংযুক্ত  করতে হবে। আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।

নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিসের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আজিজ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. জামাল হায়দার, ডিইউজের সভাপতি শহীদুল ইসলামসহ সশস্ত্র বাহিনীর উর্ধ্বতন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

ডিএইচবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।