ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৫ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

‘মানব পাচার বন্ধে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে’

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৮, জুলাই ৩০, ২০২৫
‘মানব পাচার বন্ধে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে’

ঢাকা: মানব পাচারকে একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সংগঠিত অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে, বাংলাদেশ এ অপরাধ নির্মূলে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। একই সঙ্গে মানব পাচার বন্ধে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।

বুধবার ( ৩০ জুলাই) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিশ্ব মানব পাচার বিরোধী বিশ্ব দিবস ২০২৫ উপলক্ষে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ জাতিসংঘ অভিবাসন নেটওয়ার্কের কাউন্টার-ট্র্যাফিকিং ইন পারসনস টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে এক উচ্চপর্যায়ের জাতীয় সভার আয়োজন করা হয়। এবারের বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য ছিল- ‘মানব পাচার একটি সংগঠিত অপরাধ-শোষণ বন্ধ করুন’।

অনুষ্ঠানে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন — যাঁরা সকলেই পাচার চক্র ধ্বংস, সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার এবং ভুক্তভোগী ও বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি)  খোন্দকার মো. মাহবুবুর রহমান তার মূল বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ পাচার নির্মূলে কঠোর আইন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও গভীর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা আমাদের প্রচেষ্টার কেন্দ্রে থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে কোইকার ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর সুজিন কং বলেন, মানব পাচার আমাদের সময়ের অন্যতম গুরুতর মানবাধিকার সংকট, যা মানুষের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও মর্যাদা কেড়ে নেয়। কোইকা বাংলাদেশ ও আমাদের অংশীদারদের পাশে থেকে এমন একটি সমাজ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেখানে প্রত্যেকে স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারে।

বাংলাদেশে আইওএম-এর চিফ অব মিশন ল্যান্স বোনো বলেন, পাচার চক্র চিহ্নিত ও ধ্বংস করতে, তাদের অর্থের পথ বন্ধ করতে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, ভুক্তভোগীদের উদ্ধার, পুনর্বাসন ও সমাজে পুনঃঅন্তর্ভুক্ত করতে সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, সিভিল সোসাইটি, বেসরকারি খাত ও কমিউনিটি আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স  ড. বের্ন্ড স্পেনিয়ার তার বক্তব্যে বলেন, মানব পাচার হলো সবচেয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি এবং এটি একটি বৈশ্বিক অপরাধ। অনিয়মিত অভিবাসন ও মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা ইউরোপের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার, এবং নিরাপদ, বৈধ ও মর্যাদাপূর্ণ শ্রম অভিবাসনকে উৎসাহিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের প্রচেষ্টার ভিত্তি হচ্ছে ইইউ-এর মানব পাচারবিরোধী কৌশল, যা চাহিদা হ্রাস, পাচারকারীদের ব্যবসায়িক মডেল ভেঙে দেওয়া এবং বিশেষ করে নারী ও শিশুদের মতো ভুক্তভোগীদের সহায়তা প্রদানের ওপর গুরুত্ব দেয়। একজন মানুষ পাচারের হাত থেকে রক্ষা পেলে, একটি জীবন বাঁচে, একটি ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধার হয়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও পুলিশ সদর দপ্তরের সিনিয়র প্রতিনিধি, যাঁরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা এবং পাচারকে সংগঠিত অপরাধ হিসেবে মোকাবিলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে একটি  কারিগরি উপস্থাপনা ছিল, যেখানে উদীয়মান পাচারের প্রবণতা ও জাতীয় প্রতিক্রিয়া কৌশল তুলে ধরা হয়।

আয়োজকরা জানান, এ দিবস উদযাপন মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় অঙ্গীকার এবং পাচারের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রতিফলন। এটি একটি বৃহত্তর সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ।

বাংলাদেশ জাতিসংঘ অভিবাসন নেটওয়ার্কের কাউন্টার-ট্র্যাফিকিং ইন পারসনস টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপের উদ্যোগে সারাদেশে এ সপ্তাহব্যাপী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রচারণা এবং কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

টিআর/জেএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।