ঢাকা, রবিবার, ২২ আষাঢ় ১৪৩২, ০৬ জুলাই ২০২৫, ১০ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

তাজিয়া মিছিলে ‘হায় হোসেন’ ধ্বনিতে মাতম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৩৪, জুলাই ৬, ২০২৫
তাজিয়া মিছিলে ‘হায় হোসেন’ ধ্বনিতে মাতম তাজিয়া মিছিল, ছবি: ডিএইচ বাদল

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে রাজধানীতে তাজিয়া মিছিল বের করেছে শিয়া সম্প্রদায়। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেন (রা.)-এর আত্মত্যাগের স্মরণে রোববার (৬ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক হোসনি দালান ইমামবাড়া থেকে শুরু হয় এই শোক মিছিল।

ভোর থেকেই কালো পোশাকে, হাতে লাল-কালো-সোনালি রঙের ঝান্ডা নিয়ে হোসনি দালানে জড়ো হন হাজারো নারী-পুরুষ। চারপাশজুড়ে ভেসে বেড়ায় ‘হায় হোসেন’, ‘হায় হোসেন’ শোকধ্বনি আর বুক চাপড়ানোর আওয়াজ। বিষণ্ন এক আবহ ছড়িয়ে পড়ে মিছিলজুড়ে।

মিছিলটি হোসনি দালান থেকে শুরু হয়ে বকশীবাজার লেন, আলিয়া মাদরাসা রোড, বকশীবাজার (কলপাড়) মোড়, উমেশ দত্ত রোড, উর্দু রোড মোড়, হরনাথ ঘোষ রোড, লালবাগ চৌরাস্তা, গোর-এ-শহীদ মাজার মোড়, এতিমখানা মোড়, আজিমপুর চৌরাস্তা, ইডেন কলেজ, নীলক্ষেত মোড়, মিরপুর রোড, ঢাকা কলেজ, সায়েন্সল্যাব মোড়, ধানমন্ডির ২ নম্বর রোড, বিজিবি ৪ নম্বর গেট, সাত মসজিদ রোড হয়ে শেষ হয় ধানমন্ডি লেকের পাড়ে প্রতীকী ‘কারবালা’ প্রান্তে। শোকের আবহে স্তব্ধ হয়ে যায় নগর।

মিছিলে ছিল ধর্মীয় শোক ও কারবালার প্রতীকের বহিঃপ্রকাশ। ছোট-বড় সবাই কালো পোশাকে, কপালে কালেমা লেখা কালো ফিতা বাঁধা। দুই সারিতে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় অংশগ্রহণকারীরা। ছোট ছোট ট্রাকে করে বিতরণ করা হয় পানি ও শরবত।

কারবালার স্মৃতিচারণে কালো মখমলের চাঁদোয়ার নিচে বহন করা হয় ইমাম হোসেনের প্রতীকী কফিন। মিছিলের শুরুর দিকে ছিল কালো ব্যানার, বেহেস্তা (লাল-সবুজ নিশান), পাঞ্জা আলম, মাতম ও জারি তাজিয়া। মিছিলের শেষে ছিল ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের দুটি প্রতীকী ঘোড়া। ঘোড়াগুলোর পা দুধ দিয়ে ধুয়ে সেই দুধ সংগ্রহ করতে দেখা যায় শিয়া অনুসারীসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের।

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কয়েকজন যুবককে ব্লেড ও ধারালো বস্তু দিয়ে রক্তাক্ত মাতম করতে দেখা গেছে। তারা মিছিলের সঙ্গে সঙ্গে শরীর আঘাত করে শোক প্রকাশ করেন।

তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারী বিডিআর ১ নম্বর গেট পিলখানা থেকে আসা আসিফ হাসান বলেন, আমরা গভীরভাবে শোকাহত। কারবালার শহীদদের কথা বারবার মনে পড়ে। ১ মহরম থেকে ৯ রবিউল আউয়াল—এই ২ মাস ৮ দিন আমরা শোক পালন করি। এই তাজিয়া মিছিল কারবালার শহীদদের স্মরণে করা হয়, যেখানে মাতম, জিঞ্জির মাতম, বেহেস্তা, গাজী আব্বাস আলম, বাইক আলম থাকে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের দিন।

লালবাগের তাবাসসুম বলেন, ‘মা ফাতেমার কলিজার টুকরা কারবালার প্রান্তরে এই দিনে শহীদ হন। এটি আমাদের মুসলমানদের জন্য গভীর শোকের দিন। আমরা শিয়া মুসলমানরা তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমে শোক প্রকাশ করি। ’

মিছিল ঘিরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‍্যাব, ফায়ার সার্ভিসের রেসকিউ টিমসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিল পুরো সড়কজুড়ে।

পবিত্র আশুরা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর কাছে শোকাবহ, তাৎপর্যপূর্ণ ও মহিমান্বিত একটি দিন। হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) সপরিবারে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শাহাদাতবরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে এই মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়াও মহররম মাসের ১০ তারিখ মুসলিম বিশ্বে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। দিনটি শ্রদ্ধা ও ভাবগাম্ভীর্যে পালন করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

ডিএইচবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।