ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩২, ২৬ জুন ২০২৫, ০০ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

দুই দিনব্যাপী ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ শুরু শুক্রবার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৫৭, জুন ২৬, ২০২৫
দুই দিনব্যাপী ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ শুরু শুক্রবার রোডমার্চ সফল লিফলেট বিতরণ

ঢাকা: চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা, রাখাইনে করিডোর দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধের দাবিতে শুক্রবার (২৭ জুন) ২ দিনব্যাপী ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ শুরু হবে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন)  সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

 

এতে বলা হয়, নিউমুরিংসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া বন্ধ, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে পরিচালনা, রাখাইনে করিডোর দেওয়ার ষড়যন্ত্র বন্ধ, স্টারলিংক, সমরাস্ত্র কারখানা, করিডোরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে জড়ানোর উদ্যোগ বন্ধ, মার্কিন ভারতসহ সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী দেশগুলোর সঙ্গে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারসহ বিগত সব সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি প্রকাশ কর এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি বাতিলের দাবিতে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের উদ্যোগে ২ দিনব্যাপী ঢাকা-চট্টগ্রাম শুক্রবার (২৭ জুন) রোডমার্চ শুরু হবে।

শুক্রবার (২৭ জুন) সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে রোডমার্চ নারায়ণগঞ্জ-সোনারগাঁও-চান্দিনা-কুমিল্লা হয়ে ফেনী পৌঁছাবে। শনিবার (২৮ জুন) ফেনী থেকে যাত্রা শুরু করে বিকেলে চট্টগ্রামের বন্দরের সামনে সমাবেশের মধ্য দিয়ে রোডমার্চ শেষ হবে।

এ উপলক্ষে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের পক্ষ থেকে প্রচারিত প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, “চট্টগ্রাম বন্দর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ। দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি-হৃৎপিণ্ড। আমদানি ও রপ্তানির ৯২ ভাগ এ বন্দর দিয়ে হয়। ভৌগোলিক কারণে এ বন্দরের সঙ্গে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা জড়িত। চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বৃহৎ ও লাভজনক টার্মিনাল হলো নিউমুরিং টার্মিনাল। এ টার্মিনালকে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিল স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার। তার ধারাবাহিকতায় দেশ ও জনগণকে না জানিয়ে গোপনে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক দরপত্র ছাড়াই দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড কোম্পানিকে চট্টগ্রামের নিউমুরিং টার্মিনালের দায়িত্ব দিতে সরকার এখন মরিয়া। সরকারের এ এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বন্দরকে আরও লাভজনক করতে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়া হবে আত্মঘাতী। এর ফলে বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদের উপর বিদেশি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

এছাড়া, সরকার মিয়ানমারের রাখাইনে কথিত মানবিক করিডোর বা ত্রাণ চ্যানেল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই করিডোর দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু মানবিক করিডোরের কথা বলা হলেও তা মার্কিনের ‘চীন ঘেরাও’ নীতির স্বার্থে যে ব্যবহৃত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিকভাবে আক্রান্ত হবে। বাংলাদেশকে মায়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য করবে। ভারত, চীন ও পাকিস্তানসহ নানা শক্তির দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও ছায়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে রাখাইন করিডোর মারফত বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পাবে।

সরকার মার্কিন স্যাটেলাইট কোম্পানি স্টারলিংককে এদেশে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের অনুমতি দিয়েছে এবং ইতোমধ্যে তা চালু হয়েছে। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি। কারণ এই মার্কিন কোম্পানি শুধু নিরীহ ইন্টারনেট সেবাই প্রদান করে না, সেই সাথে দেশে দেশে সামরিক ও রাজনৈতিক নজরদারি চালায়। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে, ফিলিস্তিন-ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা-ইসরাইলের পক্ষে তথ্য প্রযুক্তিগত অস্ত্র হিসাবে কাজ করেছে এই ইন্টারনেট কোম্পানি। সুতরাং এই ইন্টারনেট কোম্পানি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।

প্রচারপত্রে বলা হয়, সামরিক শিল্পের মতো স্পর্শকাতর খাতে তুরস্ক ও কাতারকে অস্ত্র তৈরির কারখানা নির্মাণের আহ্বান করেছে এই সরকার। যুদ্ধমুক্ত পৃথিবী ও বিশ্বশান্তির পক্ষে বংলাদেশের জন্য এটা সামরিক ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে। তাই এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার দাবি জানাচ্ছি। কারণ আমরা প্রাণহানী নয়, প্রাণ বাঁচানোর বিনিয়োগ চাই। যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই, ধ্বংস নয় সৃষ্টি চাই। সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা মনে করি দেশের সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশ বিরোধী সকল পদক্ষেপ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ”

প্রসঙ্গত, কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবিতে এই রোডমার্চ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রোডমার্চে বিভিন্ন বামপন্থি, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, সংগঠন মিলিয়ে ৫০টিরও অধিক সংগঠন এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।  

আরকে/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।