ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ আষাঢ় ১৪৩২, ২৪ জুন ২০২৫, ২৭ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

সচিবালয়ে কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে পর্যালোচনা কমিটির বৈঠক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:৫৬, জুন ২৩, ২০২৫
সচিবালয়ে কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে পর্যালোচনা কমিটির বৈঠক

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে থাকা কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে পর্যালোচনা কমিটি। বৈঠকের পরও তারা মঙ্গল ও বুধবার গণসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।


 
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-মহাসচিব মো. নুরুল ইসলাম সোমবার (২৩ জুন) রাতে এতথ্য জানিয়েছেন।
 
অধ্যাদেশ জারির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য গঠিত কমিটির সঙ্গে সোমবার (২৩ জুন) বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের তিন সদস্যের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
 
বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিনিধিসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

বৈঠকে ঐক্য ফোরামের কো-মহাসচিব মো. নজরুল ইসলাম ছাড়াও কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম ও মো. বাদিউল কবীর উপস্থিত ছিলেন।
 
কর্মচারীদের পক্ষে জানানো হয়, বৈঠকে ঘণ্টাব্যাপী আলাপ-আলোচনা করা হয়। কমিটির সদস্যদের জিজ্ঞাসার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারির ফলে সারাদেশের কর্মচারীদের ক্ষোভের কারণগুলো তুলে ধরা হয়।
 
প্রথমত:
অধ্যাদেশে অনানুগত্যের জন্য চাকরিচ্যুতির বিধান রাখা হয়েছে। কোনো অফিস প্রধানের কথা যদি নৈতিকমান সম্পন্ন কোনো কর্মচারী না শোনে, তখন সেই ভালো কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনানুগত্যের অভিযোগ এনে তাকে চাকরিচ্যুত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। অনানুগত্য প্রমাণে কর্মচারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দারুণভাবে ব্যর্থ হবে। এ অধ্যাদেশ বহাল রাখা হলে কর্মকর্তারা নিজের ইচ্ছামতো যখন-তখন যে কাউকে চাকরিচ্যুত করতে পারবেন।
 
দ্বিতীয়ত:
শুধুমাত্র কর্মস্থলে অনুপস্থিতির জন্য চাকরিচ্যুত হবে। কর্তৃপক্ষের অন্যায় ও খামখেয়ালিপনার শিকার হতে পারেন কর্মচারীরা।
 
তৃতীয়ত:
কর্মস্থলে অনুপস্থিত বা বিরত থাকতে উসকানি বা প্ররোচিত করার জন্য চাকরিচ্যুত হবে। এর মানে- কর্মচারিগণ তাদের ন্যায্যতা-প্রাপ্যতার বিষয়ে কোনোরূপ দাবি দলবদ্ধভাবে উত্থাপন করতে পারবে না। এতেও কর্তৃপক্ষের অন্যায় ও খামখেয়ালিপনার শিকার হতে পারেন কর্মচারীরা।
 
চতুর্থত:
কর্মে উপস্থিত বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করার জন্য চাকরিচ্যুত হবে। এতে করে কতিপয় কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারী, মনগড়া, কাল্পনিক ও খামখেয়ালীর কারণে গায়েবী অভিযোগে বিনা তদন্তে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
 
পঞ্চমত:
জারি করা অধ্যাদেশে কর্মচারীর অপরাধ তদন্তের সুযোগ রাখা হয়নি। অপরাধীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেই। তদন্ত ছাড়া একজন কর্মচারী দোষী না নির্দোষ, অভিযোগ সত্য না মিথ্যা তা কিভাবে প্রমাণ হবে? এই ধরনের ধারার অপপ্রয়োগের আশঙ্কা অনেক বেশি।
 
ষষ্ঠত:
নিবর্তনমূলক এই অধ্যাদেশটি নারীদের জন্য আরও বেশি ভয়ংকর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অসাধু কর্মকর্তা তার অধীনস্ত নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নানাভাবে নাজেহাল করতে পারবেন। কর্মরত নারী সদস্যদের বাজে প্রস্তাব দিলে এবং তাতে সাড়া না পেলে ভিন্ন আঙ্গিকে অনানুগত্যের অভিযোগ আনতে পারে। যে কারণে নারী কর্মচারীদের জন্য অধ্যাদেশটি অনিরাপদ হবে।
 
সপ্তমত:
কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বার্তা বা সংবাদ ই-মেইলে নোটিশ আকারে পাঠানোর বিধান করা হয়েছে। এতে সমস্যা তৈরি হবে। বৈরী আবহাওয়া ও নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে অনেক সময় ই-মেইল ওপেন করা হয় না। অনেকে নেটওয়ার্কের বাইরে থাকতে পারে। ইন্টারনেট সচরাচর নাও থাকতে পারে। ফলে অভিযুক্ত কর্মচারী জানবেই না তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে এবং জবাব দিতে হবে। এটা কৌশলে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে।
 
আন্দোলনকারী নেতারা জানান, কর্মচারী নেতাদের বক্তব্য কমিটির সদস্যগণ মনোযোগ সহকারে শুনেন। অধ্যাদেশের ওপর আপত্তিগুলোর উপর আরও অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যাচাই-বাছাই করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতৃবৃন্দের সংগে আগামী ২৫ জুন পুনরায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
 
তারা আরও জানান, বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম ঘোষিত আগামী ২৪-২৫ জুন গণসংযোগ কর্মসূচি চলমান থাকবে। তথাকথিত বিতর্কিত অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া অধবি আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য সারাদেশের কর্মচারীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়।
 
এমআইএইচ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।