ঢাকা, শুক্রবার, ৭ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ জুন ২০২৫, ২৩ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

উত্তরায় কোটি টাকা ছিনতাই, গাড়ির নম্বরের সূত্রে গ্রেপ্তার ৫ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:০৬, জুন ১৯, ২০২৫
উত্তরায় কোটি টাকা ছিনতাই, গাড়ির নম্বরের সূত্রে গ্রেপ্তার ৫ 

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরা এলাকায় নগদ কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে র‌্যাব পরিচয়ে কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ছিনতাইয়ের এক কোটি আট লাখ ১১ হাজার টাকার মধ্যে ২২ লাখ ১০ হাজার ৭৮০ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত ১২ লাখ টাকা ও হাইয়েস গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন, মো. হাসান (৩৫), গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিন (৫০), শেখ জালাল উদ্দিন ওরফে রবিউল (৪৩), ইমদাদুল শরীফ (২৮) ও সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপন (২৭)।

বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত হায়েস গাড়ির নম্বরের সূত্র ধরে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে ছিনতাইকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) এবং উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।  

পুলিশ জানায়, দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্বে দিয়েছেন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সাবেক সার্জেন্ট ও চাকরিচ্যুত সাবেক পুলিশ কনস্টেবল। দুর্ধর্ষ এ ডাকাতির ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিন পুলিশের চাকরিচ্যুত কনস্টেবল। তার বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ নানা অপরাধে ১৭টি মামলা রয়েছে। চক্রের অন্যতম সহযোগী সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সাবেক সার্জেন্ট শেখ জালাল উদ্দিন ওরফে রবিউল। আরও অন্তত তিনজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মুহিদুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ১৪ জুন সকাল ৮ টা ৫৫ মিনিটের দিকে নগদের ডিস্ট্রিবিউটর আব্দুল খালেক নয়ন তার উত্তরার ১২ নম্বর রোডের ৩৭ নম্বর বাসা থেকে প্রতিষ্ঠানের চারজন কর্মচারীসহ চারটি ব্যাগে এক কোটি আট লাখ ১১ হাজার টাকা নিয়ে দুটি মোটরসাইকেলযোগে উত্তরার নগদের অফিসের উদ্দেশে রওনা হয়।

পথে উত্তরা ১২ ও ১৩ নং রোডের সংযোগস্থলে একটি কালো রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে ‘র‌্যাব’ লেখা কালো কটি পরিহিত মুখে কালো কাপড় বাঁধা ৬-৭ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি হাতে অস্ত্র নিয়ে নামে। তাদের কাছে আসতে দেখে নগদের টাকা বহনকারী কর্মচারীরা টাকার ব্যাগ নিয়ে দৌঁড়ানোর চেষ্টা করে। তখন দুষ্কৃতকারীরা তাদের ধাওয়া করে চারটি ব্যাগে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং তাদের তিনজনকে মাইক্রোবাসে তুলে হাত-চোখ বেঁধে মারধর করে। ঘটনাস্থল থেকে একজন কর্মচারী পালাতে সক্ষম হন।

পরে ছিনতাইকারীরা তিনজনকে তুরাগ থানার ১৭ নং সেক্টরের বৃন্দাবন এলাকায় ফেলে রেখে টাকা, দুটি অফিসিয়াল মোবাইল ফোন ও তিনটি ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আব্দুর রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা হয়।

তিনি বলেন, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর উত্তরা বিভাগ ও ডিবি ঘটনার রহস্য উদঘাটন, আসামি গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধারে তদন্ত কাজ শুরু করে। চৌকস পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ও চালককে শনাক্ত করে। বুধবার (১৮ জুন) রাত পৌনে ২টায় খিলগাঁও থানা এলাকা থেকে মাইক্রোবাসের চালক মো. হাসানকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পশ্চিম থানার এক দল। এ সময় তার কাছ থেকে নকল একটি নেমপ্লেট ও নগদ আট হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। হাসানের দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সবুজবাগ থানার মাদারটেক চৌরাস্তার স্বপন মিয়ার গ্যারেজ থেকে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়।

ডিবি উত্তরা বিভাগের একটি টিম ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে। পরবর্তীতে ডাকাত চক্রের হোতা গোলাম মোস্তফা ঘরামী ওরফে শাহিনকে বুধবার(১৮ জুন) রাত পৌনে ১১টার দিকে ঢাকার উত্তরা এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তার কাছ থেকে লুণ্ঠিত ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইমদাদুল শরীফকে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আদাবর থানাধীন বায়তুল আমান হাউজিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয। এ সময় তার কাছ থেকে লুষ্ঠিত ৮ লাখ ৪ হাজার ৭৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার শাহিন ও শরীফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট শেখ জালাল উদ্দিনকে একই দিন রাতে সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে নগদ ৬৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার জালাল নিজেকে ক্যাপ্টেন জালাল হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। জালাল ঘটনার পরদিন লুষ্ঠিত ১২ লাখ টাকা ঢাকা ব্যাংকের নিজ নামীয় অ্যাকাউন্টে জমা করে। ওই টাকা জব্দের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

জালালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছিনতাইকারী চক্রের অপর সদস্য সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপনকে বুধবার রাতে এয়ারপোর্ট রেলস্টেশন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে র‌্যাব ও পুলিশের নকল আইডি কার্ড, লাঠি, সিগন্যাল লাইট, সেনাবাহিনীর লোগো সম্বলিত মানিব্যাগ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মুহিদুল ইসলাম জানান, ছিনতাইকারী দলের নেতা মোস্তফা ওরফে শাহিন একজন চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল। তার বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ অন্তত ১৭টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ১৯৯৫ সালে রমনায় অস্ত্রসহ ধরা পড়ার পর চাকরি হারায় শাহিন। তার গড়া চক্রের প্রধান সহযোগী শেখ মো. জালাল উদ্দিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট। সে ক্যাপ্টেন পরিচয় দিয়ে চলতো। দুজনের নেতৃত্বেই এ দলটি দীর্ঘদিন ধরে র‌্যাব ও পুলিশের পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদে গ্রেপ্তারসহ অবশিষ্ট টাকা উদ্ধারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উত্তরা বিভাগের ডিসি বলেন, আমরা নগদ কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের একাধিক কর্মচারিকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এখন পর্যন্ত আমরা কারো যোগসাজশ বা তথ্য দিয়ে ছিনতাইকারী দলকে সহযোগিতা করার তথ্য পাইনি। যে দুই পার্টনারের টাকা তারাও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ বা সন্দেহের কথা জানাননি। তবে আমরা তদন্ত করছি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে এখনো সাসপেনশন আছে।

এমএমআই/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।