ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ জুন ২০২৫, ২০ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

নীলাভ জলরাশির ছোঁয়ায় মায়াবী সড়ক

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৩৪, জুন ১৭, ২০২৫
নীলাভ জলরাশির ছোঁয়ায় মায়াবী সড়ক নীলাভ জলরাশির ছোঁয়ায় মায়াবী সড়ক

রাঙামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটি প্রকৃতি এবং অপরূপ বৈচিত্র্যে ভরপুর। এ অঞ্চলে ক্ষণে ক্ষণে প্রকৃতি ভিন্ন রূপে ধরা দেয়।

এমন রূপ যে কাউকে কাছে টানে আপন পরশে। পার্বত্য এ জেলাটির সড়কগুলো যেমন ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি রহস্যময়। যে কারণে পর্যটকদের আকর্ষণ করে।  

তৎকালীন সরকার ১৯৬৪ সালে রাঙামাটি জেলার শহরের সঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে কাপ্তাই হ্রদের মধ্যখানে বাঁধ নির্মাণ করে কাঁঠালতলীস্থ ফিসারি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছিল। ফিসারি সংযোগ সড়কটির ওপর জেলার পুরো শহর ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে। অর্থাৎ সড়কটি না থাকলে রাঙামাটি শহর অচল হয়ে যাবে। সড়কটিকে রাঙামাটির প্রাণ ভোমরা বলা হয়।  

সড়কটি শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়; এর দু’পাশে অসংখ্য সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছসহ নানা ফুলের গাছ আপনাকে পুলকিত করবে। বৃক্ষের ছায়ায় সড়কে দাঁড়িয়ে কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।  

তবে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি নির্মাণের পর থেকে আর কোনো সংস্কারের কাজ করা হয়নি। যত অবহেলা অনাচার এ সড়কটির ওপর। গত ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের সময় গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।  

এছাড়াও হ্রদের ঢেউ ও পাহাড়ি ঢলের আঘাতে সড়কটি দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল।  

সড়কটি সংস্কার এবং সড়কের দু’পাশের সৌন্দর্য ধরে রাখতে স্থানীয় জনসাধারণ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছিল অসংখ্যবার। অবশেষে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি মিটিয়ে দিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)।  

সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে ‘পাহাড় ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ২৮৬ কোটি টাকার বিশাল বাজেট নিয়ে শুরু করে বাঁধটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ।  

প্রকল্পের আওতায় ৬৬৩ মিটার দীর্ঘ বাঁধে নির্মিত হয়েছে শক্তিশালী আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল। পাশাপাশি মাটি ভরাট করে সম্প্রসারণ করা হয়েছে সড়কটির প্রশস্ত। এ পর্যন্ত ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ, যাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫২ কোটি টাকা।

বর্তমানে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ৮৮ লাখ টাকার সৌন্দর্যবর্ধন কাজ চলছে বাঁধের সম্প্রসারিত অংশে। গড়ে তোলা হচ্ছে হাঁটার পথ, বিশ্রামের জায়গা ও নান্দনিক বিনোদন স্পট যা পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ হয়ে উঠবে।  

সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরো কাজ শেষ হলে বাঁধটি হয়ে উঠবে রাঙামাটির অন্যতম পর্যটন স্পট। এই বাঁধ রাঙামাটির রিজার্ভবাজার, তবলছড়ি ও বনরূপা শহরের তিন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সংযোগস্থল।  


কাপ্তাই হ্রদের দু’পাশে বিস্তৃত নীলাভ জলরাশি আর পাহাড়ি দৃশ্যপট এই বাঁধটিকে দর্শনার্থীদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয় করে তুলেছে। তবে বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় বাঁধটির অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছিল। একপর্যায়ে সওজ খুঁটি পুঁতে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে যান চলাচল চালু রেখেছিল।

আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙামাটি পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড মিলেও বাঁধটি রক্ষায় টেকসই কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ২০১৭ সালের ১৩ জুনের পাহাড় ধসে জেলার ১৫১টি সড়ক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই দুর্যোগ থেকেই বাঁধটির পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয় সওজ।

রাঙামাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ফিশারি বাঁধ শুধু সড়ক নয়, এটি রাঙামাটির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জীবনের অংশ। আমরা এটিকে নিরাপদ, টেকসই ও পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করেছি। প্রকল্পের কাজ আগামী জুনের মধ্যেই শেষ হবে বলে যোগ করেন প্রকৌশলী।  

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।