ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৩ জুন ২০২৫, ১৬ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

অর্থপাচারে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ কথা ভাবছে সরকার

নিউজ ডেস্ক    | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:২১, জুন ১২, ২০২৫
অর্থপাচারে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ কথা ভাবছে সরকার আহসান এইচ মনসুর

ঢাকা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থপাচারে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে ‘সমঝোতা’র পথে হাঁটতে পারে সরকার। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।

পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর মামলাগুলোর ক্ষেত্রে সমঝোতায় পৌঁছানো ‘একটি সম্ভাব্য বিকল্প’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘যদি আইন লঙ্ঘনের প্রকৃতি তুলনামূলকভাবে হালকা প্রকৃতির হয়...তবে আমরা দেওয়ানি মামলা করব এবং সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আর্থিক সমঝোতার কথা বিবেচনা করা হবে। ’ তবে সম্ভাব্য কারা এ প্রক্রিয়ার আওতায় আসতে পারেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক আইনি লড়াইয়ের জন্য ১০ কোটি ডলার পর্যন্ত তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব সম্পদ শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকা ব্যক্তিরা বিদেশে সরিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গত বছরের আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণআন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এই সরকার গঠিত হয়।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার অভিযোগ করেছে—পূর্ববর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা বাংলাদেশ থেকে দশ-বিশ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছেন।

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ১১টি অগ্রাধিকারভিত্তিক তদন্ত শুরু হয়েছে, যার মধ্যে শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যসহ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী আরও কয়েকটি পরিবার রয়েছে।  

পাচারের অর্থ ফেরাতে লন্ডন সফরে যাওয়া অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে আরও সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘এগুলো চুরি করা অর্থ, তাই যুক্তরাজ্য সরকারের আইনি ও নৈতিক দায়িত্ব এই টাকা খুঁজে বের করে বাংলাদেশকে ফেরত দেওয়া। ’

সরকারের একটি শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। আহসান মনসুর ও অন্য কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, ব্যাংক বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে এবং অবকাঠামো প্রকল্প থেকে টাকা আত্মসাত করে এই অর্থপাচার করা হয়েছে।

অর্থ উদ্ধার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, সরকার এখন আইনগত মামলা পরিচালনার খরচ বহন করে অর্থায়ন দেয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে, যারা মামলা থেকে অর্জিত ক্ষতিপূরণের ভাগ পাবে। মনসুর বলেন, ‘আমরা এই ধরনের অর্থায়নে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি এবং যতটা সম্ভব এর মাধ্যমে অর্থ উদ্ধার করতে চাই। ’ 

সিডনিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ওমনি ব্রিজওয়ে’ ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে নিশ্চিত করেছে, তারা বছরের প্রথমার্ধে ঢাকা সফর করে আহসান মনসুর ও ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ওমনির নির্বাহী উইগার উইলেনগা বলেন, ‘আমরা বিশেষত অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানো অর্থসহ অদক্ষ ঋণের পুনরুদ্ধারে ব্যাংক খাতকে সহায়তা করতে আগ্রহী। ’

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।