ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১০ জুন ২০২৫, ১৩ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদের তৃতীয় দিনেও বিনোদনকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:১৮, জুন ৯, ২০২৫
ঈদের তৃতীয় দিনেও বিনোদনকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড়

ঢাকা: ঈদ এলেই বিনোদনকেন্দ্রগুলোয় বাড়ে দর্শনার্থীদের ভিড়। চার দেয়ালে বন্দি শিশুরা পায় প্রকৃতি ও পরিবারের সান্নিধ্য।

এর ব্যতিক্রম হয়নি এবারের ঈদেও। পবিত্র ঈদুল আজহার তৃতীয় দিনেও দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে।

সোমবার (৯ জুন) রাজধানীর জিয়া উদ্যান, সামরিক জাদুঘর, নভোথিয়েটার, বিমান বাহিনী জাদুঘর, চিড়িয়াখানা, হাতিরঝিল, শিশুমেলা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

নানা রকম ব্যস্ততায় ভরা যান্ত্রিক শহরে পরিবারের জন্য দু-দণ্ড সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়ে রাজধানীবাসীর। তাই ঈদের ছুটিতে পরিবারকেই সময় দেন চাকরিজীবীরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেরিয়ে পড়েন মুক্ত হাওয়ায় কিছুটা সময় কাটাতে। বিশেষ করে ঈদের সময় ঘোরাঘুরির এই সময়টা পরিবারের সবার সঙ্গে আনন্দে কাটে শিশুদের। বড়রাও প্রকৃতির সানিধ্যে এসে কিছু সময়ের জন্য মুক্তি পান যান্ত্রিক জীবন থেকে।

জিয়া উদ্যানে প্রকৃতির সানিধ্যে
বিভিন্ন ধরনের গাছপালায় ঘেরা জিয়া উদ্যানে ঈদের দিন বিকেল থেকেই ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। ঈদের তৃতীয় দিনেও অব্যাহত ছিল সেই চাপ। সকাল থেকে তেমন দর্শনার্থীদের ভিড় না থাকলেও দুপুরের পর থেকে তা বাড়তে শুরু করে। কয়েক হাজার মানুষ ভিড় জমান লেকের পাশের এই ছায়া শীতল উদ্যানে।

আগতদের কেউ ঘুরে দেখছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর, কেউবা পাখির কলতানে মুখর হয়ে ঘুরে দেখছেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। কেউবা ছোট শিশুদের নিয়ে লেকের পাশে বসে নিচ্ছেন খানিক স্বস্তির নিঃশ্বাস। কেউবা আবার ব্যস্ত ছবি তোলায় বা বিভিন্ন ধরনের খেলায় অংশ নেওয়ায়।

স্বামী, সন্তান, শাশুড়ি ও ননদকে নিয়ে মোহাম্মদপুর থেকে জিয়া উদ্যানে ঘুরতে এসেছেন সামিয়া রহমান নামে এক গৃহিণী। তিনি বলেন, ঈদের দিন কোরবানির পশু কাটাকাটির জন্য বের হওয়া হয়নি। গতকাল বাসার পাশেই তুরাগ নদীর তীরে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আজ আবার জিয়া উদ্যানে এলাম। এখান থেকে সংসদ ভবন ঘুরে তারপর বাসায় যাবো।

তিনি আরও বলেন, শিশুরা তো সব সময় ঘরেই তাকে। দূষণ ও যানজটের কারণে তাদের নিয়ে ঘুরতে বের হওয়া হয় না। তাই প্রতি ঈদেই তাদের নিয়ে ঘুরতে বের হই। তারা এতে খুব খুশি হয়। ঈদের দিন থেকেই জিজ্ঞেস করতে থাকে কখন ঘুরতে বের হবো।

জিয়া উদ্যানে বাদাম বিক্রি করেন বেলাল। তিনি বলেন, ঈদের দিন দর্শনার্থী কিছুটা কম ছিল। গতকাল সবচেয়ে বেশি ছিল। আজ কিছুটা কম হলেও অনেক দর্শনার্থী এসেছে। কিন্তু গরমের কারণে বাদাম বিক্রি ভালো হচ্ছে না। গতকাল মাত্র দুই হাজার টাকার বাদাম বিক্রি করেছি। আজ এখনো এক হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারিনি।

অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি নভোথিয়েটারে
রাজধানীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র বিজয় সরণি মোড়ে অবস্থিত নভোথিয়েটার। প্রতি ঈদেই অসংখ্য দর্শনার্থী এখানে ঘুরতে আসেন। মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্র অবাক বনে যায় শিশুরা। তবে এবার অব্যবস্থাপনার কারণে ভোগান্তি পড়তে হয়েছে আগতদের। নভো থিয়েটারে ঢুকতে টিকিট কাটার লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে তাদের।

দর্শনার্থীদের অভিযোগ, নভোথিয়েটারে অনলাইনে টিকিট কাটার ব্যবস্থা নেই। আবার কাউন্টারে মাত্র একজন টিকিট দিচ্ছে। অথচ লাইনে দাঁড়ানো কয়েকশ’ মানুষ। ফলে প্রত্যেককেই ঘণ্টাখানেকের বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে টিকিট কাটতে। ঈদে ঘুরতে বের হয়ে এই ধরনের ভোগান্তি মেনে নেওয়া যায় না।

ডিএনসিসির কোভিড হাসপাতালে কাজ করেন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ইরফাত ই হক। স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে নভোথিয়েটারে ঘুরতে এসেছেন তিনি। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হচ্ছিলেন তিনি। সন্তানকে নিয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে তার স্বামী। ইরফাত ই হক বলেন, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো টিকিট পাইনি। ঈদের সময় বিনোদনকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ে। কিন্তু এই বিষয়টি নভোথিয়েটার কর্তৃপক্ষ মাথায় রাখেনি। যার কারণে আগত দর্শনার্থীদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। ঈদের সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে এই ভোগান্তি মেনে নেওয়া যায় না।

দীর্ঘ লাইনের কারণে টিকিট না কেটেই ফিরে যাচ্ছিলেন নাখালপাড়ার বাসিন্দা মো. আতাউল্লাহ। তিনি বলেন, বাসার পাশেই হওয়ায় ভেবেছিলাম পরিবার নিয়ে নভোথিয়েটার ঘুরবো। সন্তানদের একটু ভালো সময় কাটবে। কিন্তু এখানে যে লাইন, তাতে সন্তানরা বরং বিরক্ত হবে। তার থেকে ভালো সামরিক জাদুঘর ঘুরে আসি।

টিকিটের দীর্ঘ সারি নেই সামরিক জাদুঘরে
নভোথিয়েটারের পাশেই অবস্থিত সামরিক জাদুঘর। নভোথিয়েটারে টিকিটের দীর্ঘ সারি দেখা গেলেও সামরিক জাদুঘরে ঢুকতে তেমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না আগতদের। বরং লাইনে দাঁড়ানো ছাড়াই টিকিট কেটে সামরিক জাদুঘরের বিভিন্ন সামরিক যান উপভোগ কারতে পারছেন দর্শনার্থীরা।

রাজধানীর শাহজাহানপুর থেকে পরিবার নিয়ে সামরিক জাদুঘরে আসা গৃহিণী মৌসুমী ইসলাম বলেন, টিকিট কাটতে কোনো কষ্টই হয়নি। গতকাল বেইলি রোডে ঘুরেছি। আজ এখানে ঘোরার পর যদি সময় পাই তাহলে অন্য জায়গায়ও যাবো।

ভ্রাম্যমাণ দোকানের মেলা সংসদ ভবনের সামনে
প্রতিটি বিনোদনকেন্দ্রেই গুটি কয়েক ভ্রাম্যমাণ দোকান দেখা গেছে। তবে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে এসব দোকানের আধিক্য ছিল অনেক বেশি। যেন রীতিমতো দোকানের মেলা বসেছে। খাবার দোকান থেকে শুরু করে নারীদের বিভিন্ন সাজগোজের দোকান দেখা গেছে সংসদ ভবনের সামনে। আগতরা সেসব দোকান থেকে কেনাকাটা ও খাওয়া-দাওয়া করছেন। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে শিশুদের বিভিন্ন খেলানার দোকান। সেসব দোকানে শিশুদের খেলনা কিনে দেওয়ার বায়না মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে অভিভাবকদের।

বিমান বাহিনী জাদুঘর ও শিশুমেলায় শিশুদের ভিড়, বৃষ্টির বাগড়া
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিমান বাহিনী জাদুঘর ও শিশুমেলায়ও ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। এই দুই জায়াগায় সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে শিশুদের। মস্ত বড় বিমান দেখে চোখ ছানাবড়া ক্ষুদে দর্শনার্থীদের। শিশুমেলায়ও বিভিন্ন রাইড দেখে উৎফুল্ল তারা। তবে দুপুরে বৃষ্টির বাগড়ায় কিছুটা ফিকে হয় শিশুদের ঈদ আনন্দ।

এদিন দুপুরে বৃষ্টি শুরু হলে বিপাকে পড়েন অভিভাবকরা। বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরতে এসে তাদের আশ্রয় নিতে হয় টিকিট কাউন্টার ও মেট্রো স্টেশনের নিচে। এ সময় তাদের বেশ বিরক্ত হতে দেখা যায়।

চিড়িয়াখানায় পশু-পাখি দেখে উচ্ছ্বসিত শিশুরা
ঈদের তৃতীয় দিনেও ব্যাপক ভিড় ছিল মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায়। ঢাকাসহ বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকেও চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছেন দর্শনার্থীরা। বাঘ, সিংহ, সাপ, হরিণ দেখে উচ্ছ্বসিত শিশুরা।

এসসি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।