ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে সিএনজিতে চড়ে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে আসতে মাত্র ২০ মিনিটের মতো সময় লেগেছে মুসাইদ খানের। তারপর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বাসের টিকিট কাটতে লেগেছে দ্বিগুণ সময়।
মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ঈদ আনন্দ করতে স্ত্রী মুনতাহার কবিরকে সঙ্গে নিয়ে ময়মনসিংহের ভালুকা যাচ্ছিলেন এই যুবক। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্টের দুটি টিকিট কেটেছেন তিনি। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ালেও তাকে গুণতে হয়নি কোনো বাড়তি ভাড়া।
মুসাইদ খান বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় ঢাকার রাস্তা এখন ফাঁকা। টার্মিনালে আসতে তেমন সময়ই লাগেনি। তবে টার্মিনালে অনেক যাত্রী। টিকিট পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। অনেকে লাইন ভেঙে টিকিট কাটার কারণে ভোগান্তি হয়েছে। তবে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারার আনন্দের কাছে এটা কোনো বিষয়ই না। আগামী এক সপ্তাহ তো পরিবারের কাছেই থাকবো। কিছুটা না হয় কষ্টই করলাম।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ১০ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার (৫ জুন)। তাই বুধবার (৪ জুন) বিকেল থেকেই বাস কাউন্টারগুলোতে বেড়েছে যাত্রীর চাপ। বৃহস্পতিবার সেটি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মহাসড়কগুলোতে যানজটের কারণে রাজধানীতে ফিরতে অতিরিক্ত সময় লাগছে বাসগুলোর। ফলে মহাখালী বাস টার্মিনালে টিকিট কেটেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের।
সাধারণ সময়ে মহাখালী বাস টার্মিনালে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ২০-২২টি বাস ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্টের। সেখানে আজ ভোর থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ৬০টি বাস ছেড়ে গেছে। তারপরও এই বাসের কাউন্টারের সামনে টিকিট কাটতে ও বাসে উঠতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে প্রায় তিন শতাধিক যাত্রীকে।
ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্টের জিএম সুমন মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, গতকাল বিকেল থেকে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। আজ থেকে ছুটি শুরু হওয়ায় সকাল থেকে যাত্রীর ব্যাপক চাপ রয়েছে। একসঙ্গে অনেক মানুষ আসায় টিকিট কাটতে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। আবার মহাসড়কে যানজটের কারণে বাস আসতেও দেরি হচ্ছে। তবে বাস আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। আশা করি, সব যাত্রীই সময় মতো পরিবারের কাছে পৌঁছাতে পারবে।
মহাসড়কে যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসচালক ও স্টাফদের। অন্যরা যখন পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বাড়ির পথ ধরছেন, তখন তাদের নির্বিঘ্নে পৌঁছে দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে কাটাতে হচ্ছে পরিবহন শ্রমিকদের।
ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্টের চালক কাজল বলেন, গতকাল রাত থেকে সড়কে যানজট। যেখানে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে যানজটের কারণে লাগছে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা। দীর্ঘ সময় রাস্তায় কেটে যাচ্ছে। দিনে একটির বেশি রাউন্ড ট্রিপ দেওয়া যাচ্ছে না।
একই কথা জানান শাহ ফতেহ আলী বাসের কাউন্টার মাস্টার হান্নান। তিনি বলেন, সকাল থেকে আমাদের ২০টি বাস ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ছাড়তে পারছি মাত্র ছয়টি। যানজটের কারণে প্রতিটি বাস ছাড়তে তিন থেকে চার ঘণ্টা দেরি হয়েছে। এতে যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
শাহ ফতেহ আলী বাসের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে দেড় বছরের সন্তানকে কোলে নিয়ে বাতাস করতে দেখা যায় মার্চেন্ডাইজার মো. রেফায়েত উল্লাহ সরকারকে। পরিবার তিনি গাইবান্ধা যাচ্ছেন তিনি। রেফায়েত বলেন, প্রায় ১৫ দিন আগে টিকিট কেটেছি। দুপুর সোয়া ১২টায় বাস ছিল। কিন্তু দুপুর ২টা বাজে এখনো বাস আসেনি। কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে কাউন্টার থেকে সেটাও বলতে পারছে না। ছোট শিশু নিয়ে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তবে এটা উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের প্রতিবছরই পোহাতে হয়।
এদিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মহাখালী বাস টার্মিনালে দেখা যায়নি বাড়তি ভাড়ার খড়্গ। দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় প্রতিটি বাসেই নির্ধারিত ভাড়া নিতে দেখা গেছে। বাড়তি ভাড়া আদায় রোধে আছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) টিম। প্রতিবারের মতো এবারও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও র্যাবের বুথ দেখা গেছে টার্মিনালে।
বিআরটিএ-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিফা নুসরাত বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত বাড়তি ভাড়ার কোনো অভিযোগ পাইনি। আমরা কিছুক্ষণ পর পর মনিটরিং করছি। তবে অনেক কাউন্টারে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। মূলত রাস্তায় যানজটের কারণে বাস আসতে দেরি করছে। বিশেষ করে টাঙ্গাইল রুটে যানজটের কারণে মহাখালীতে যাত্রীদের বেশ ভোগান্তি হচ্ছে। তাদের ভোগান্তি নিরসনে গতকাল ৩টি ও আজ ৫টি বিআরটিসির বাস আমরা দিয়েছি।
সার্বিক বিষয়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি আবুল আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, ছুটি শুরু হওয়ায় যাত্রীর চাপ অনেক বেড়েছে। কিন্তু গাজীপুর ও যমুনা সেতুতে যানজট থাকায় বাস নির্দিষ্ট সময়ে ফিরে আসছে না। যার কারণে বাস কিছুটা দেরিতে ছাড়ছে।
বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ঈদের সময় বিমানসহ সব জায়গায় ভাড়া বাড়ে। কিন্তু আমাদের পরিবহনে ভাড়া বাড়ে না। যে কারণে অনেকে ঢাকায় ঢোকার আগে বাস ঘুরিয়ে রাস্তা থেকে যাত্রী তোলে, সঙ্গে বাড়তি ভাড়াও আদায় করে। যার দায় আসে অন্যদের ওপর। সরকারের পক্ষ থেকে এটি সমন্বয় করা দরকার।
এসসি/আরবি