ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৩ জুন ২০২৫, ০৬ জিলহজ ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সোমবার বাজেট ঘোষণা, থাকছে না কালো ব্রিফকেস

গৌতম ঘোষ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৫১, জুন ১, ২০২৫
সোমবার বাজেট ঘোষণা, থাকছে না কালো ব্রিফকেস

ঢাকা: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। আগামীকাল সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বাজেট ঘোষণা করবেন।

গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কালো ব্রিফকেস হাতে সরকারের অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করতেন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠা আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করেছে ছাত্র-জনতা। তাই এবারের বাজেট ঘোষণা হবে ব্যতিক্রম। থাকবে না কোনো কালো ব্রিফকেস।

এবার অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) স্টুডিও থেকে সরাসরি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন। এটি ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নিজের এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট।

এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেট নিয়ে এখন আমি একটা ফিলিংসে আছি। আগামী (২০২৫-২৬) অর্থবছরের বাজেটে ভালো কিছু থাকবে। মোটামুটি ভালো হবে বলে আশা করছি।

বাজেটে মহার্ঘভাতা ও মূল্যস্ফীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা কালকেই জানতে পারবেন। আশা করছি। আপনাদের জন্য ভালো কিছু থাকবে।

‘এটি গতানুগতিক বাজেট হচ্ছে’, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের এমন মন্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সেটা তার ব্যক্তিগত মতামত।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে অনুমোদন হবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেটটি অনুমোদনের পরে তাতে সই করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এর পর বাজেট ডকুমেন্টস নিয়ে রামপুরার বিটিভি ভবনে যাবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সেখান থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি বিকেল ৩টায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট বক্তৃতা প্রচার করা হবে।

জানা গেছে, স্বাভাবিক পোশাক পরেই ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বিটিভিতে তার প্রথম বাজেট উপস্থাপন করবেন। তার হাতে থাকবে না কালো ব্রিফকেস। তিনি নিজ হাতে বাজেট ডকুমেন্টস বহন করবেন বলে জানা গেছে। এ সময় তার সঙ্গে থাকবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক এবং জাতীয় রাজম্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। বাজেটের আনুষঙ্গিক ডকুমেন্টস বহন করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে থাকবেন।

আগামী মঙ্গলবার (৩ জুন) অর্থ উপদেষ্টা রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করবেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বাজেট সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন।

সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু সংসদ কার্যকর নেই, সেহেতু বাজেটের ওপর জুন মাস জুড়ে সাধারণ আলোচনারও সুযোগ নেই। বিধায় এ বছর সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে বাজেট সম্পর্কিত মতামত নেবেন অর্থ উপদেষ্টা। দেশের যেকোনো নাগরিক বাজেট সম্পর্কিত যেকোনো মতামত অর্থ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাতে পারবেন। এসব মতামতকে একত্রিত করে যা গ্রহণ করা সম্ভব তা তিনি বাজেটে যুক্ত করে আগামী ২৩ জুন অনুষ্ঠিতব্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করবেন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। উপদেষ্টা পরিষদের ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের পরে তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। যা ১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।          

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। নতুন বাজেটের আকার কমলেও পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। তবে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) চলতি অর্থবছরের ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে যা ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো এবং বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য করতেই আকার কমানো হচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কর ছাড় কমিয়ে রাজস্ব বোর্ড নতুন কর ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক উন্নতির মাধ্যমে অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।

এছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং খাদ্য মজুত ও বিতরণ ব্যবস্থা সুসংহত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একইভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো জুলাই আন্দোলনের আহত সরকারি গেজেটভুক্ত জুলাই যোদ্ধাদের আয়করে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা থাকতে পারে এই বাজেটে। নানা মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ানো হতে পারে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা।

জিসিজি/এমইউএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।