জাতীয় বাজেটে কৃষিখাতে ৪০ শতাংশ উন্নয়ন বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট। এ দাবিতে সংগঠনটি অর্থ উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশ ও মিছিল শেষে অর্থ উপদেষ্টা বরাবর এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়। কৃষকদের ন্যায্য অধিকার, খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষি খাতকে জাতীয় অগ্রগতির কেন্দ্রে আনতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বজলুর রশীদ ফিরোজ। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস, সহসভাপতি জয়নাল আবেদীন মুকুল, শফিউর রহমান শফি, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পল্টু, অ্যাডভোকেট আসাদুল ইসলাম, রবিউল টুডু, দেবাশীষ রায় এবং আদিবাসী নেতা আশানি তিরকি। সমাবেশ পরিচালনা করেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক নিখিল দাস।
বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, কৃষি হচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম খাত, কিন্তু এই খাতটি দীর্ঘদিন ধরেই চরম অবহেলার শিকার। দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪৫ শতাংশ এবং গ্রামীণ নারীদের প্রায় ৬০ শতাংশ কৃষিতে নিয়োজিত। কৃষি খাত দেশের জিডিপিতে ১১ দশমিক ২ শতাংশ অবদান রাখলেও সরকারিভাবে এর গুরুত্ব নেই বললেই চলে। কৃষি ও কৃষক ক্ষেতমজুর না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। কৃষি ও কৃষকের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত না হলে, দেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তাও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
তিনি বলেন, কৃষি উপকরণের দাম যেমন বেড়েই চলেছে, তেমনি কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে প্রতিবছর প্রায় ১১ লাখ কৃষক জমি হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়ছে। বাজার ভরে গেছে ভেজাল সার, বীজ ও কীটনাশকে, যার ফলে কৃষকরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ক্ষেতমজুরদের বছরে গড় কাজ থাকে ১৮০ দিনেরও কম। ‘আর্মি রেটে’ গ্রামীণ রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবিও বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
ফিরোজ আরও বলেন, দেশের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে হলে খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এ লক্ষ্যে তিনি জাতীয় বাজেটে কৃষি খাতে উন্নয়ন বরাদ্দের ৪০ শতাংশ নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।
সমাবেশে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, এনজিওগুলোর চড়া সুদের ঋণে কৃষক পরিবারগুলো দিশেহারা। আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই, নেই ভূমি ও জানমালের নিরাপত্তা। সমতলের আদিবাসীদের জন্য স্বাধীন ভূমি কমিশনের দাবি আজও অবহেলিত। সরকার যদি কৃষি ও কৃষকের সমস্যাগুলোর সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ না নেয়, তবে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
সমাবেশ শেষে আব্দুল কুদ্দুস, নিখিল দাস, শফিউর রহমান শফি এবং জুলফিকার আলীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অর্থ উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন। এরপর মিছিল প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল হয়ে গোপীবাগ সাদেক হোসেন খোকা সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রে গিয়ে শেষ হয়।
আরকেআর/এমজে