পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার নীলফামারী-৫৬ বিজিবির অধীনস্ত ডানাকাটা সীমান্ত এলাকায় গত শুক্রবার (১৬ মে) গভির রাতে সীমান্তের কাটাতারের উপর থাকা বাতি বন্ধ করে ভারত থেকে মানুষকে বাংলাদেশে পুশইন করা হয়েছে।
সীমান্তের বাতি বন্ধ করে মানুষ পার করার বিষয়ে রোববার (১৮ মে) বিকেলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন ডানাকাটা সীমান্ত এলাকার পাটোয়ারী পাড়া গ্রামের বাসিন্দারা।
তারা বলছেন, শনিবার (১৬ মে) রাতে শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে উঠলে কয়েকজনকে অন্ধকারে দেখতে পেয়ে ধরে ফেলেন তারা। একই সাথে সীমান্তের কাটাতারের উপর থাকা লাইট বন্ধ ছিল। এরপর খবর দেওয়া হয় বিজিবিকে। বিএসএফ পরিকল্পিতভাবে সীমান্তে থাকা বাতির আলো বন্ধ করে দিয়ে নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে বলেও জানান তারা। তবে এই পুশইন ঠেকাতে বিজিবির পাশাপাশি নিজেরা সতর্ক রয়েছেন বলে আরো জানান বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে কথা হয় পাটোয়ারী পাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব ইসলামের সাথে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রাত ১২টা থেকে ১টার সময় যখন আমরা সবাই ঘুমাচ্ছিলাম। ঠিক সে সময়ে সীমান্তে একটা শব্দ পাওয়া যায়। আমরা বের হেয়ে দেখি সীমান্তের সকল লাইট বন্ধ। অন্ধকারে কয়েকজনকে দেখে আমরা আটক করে বিজিবিকে খবর দেই। তবে লাইট বন্ধ করে এমন করে মানুষ পাঠানো আসলে- এবার নতুন দেখলাম আমরা।
স্থানীয়রা আরো বলছেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাটাতারের উপর ভারতের লাইট আমরা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা জ্বলে থাকতে দেখি। কিন্তু শনিবার রাতে হঠাৎ লাইট অফ হয়ে যায়। যার পর মানুষ পার করার ঘটনাটি ঘটে। সীমান্ত এলাকায় বসবাস করায় আমরা সর্বদা সতর্ক আছি। আমরা বিজিবিকে সহায়তার চেষ্টা করছি। যাতে বিএসএফ কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে না পারে যেন।
এর আগে গত শুক্রবার (১৬ মে) রাত থেকে শনিবার (১৭ মে) দুপুর পর্যন্ত নীলফামারী-৫৬ বিজিবির অধীনস্ত ডানাকাটা সীমান্তের পাশাপাশি উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের মালকাডাঙ্গা সীমান্তে আরো মানুষ আটক হলে বিকেলে শিশুসহ আটক ১১ জনকে বোদা থানা পুলিশের কাছে দেয়া হয়।
এদিকে বিজিবির জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে অবস্থান করে কাজ করে আসছিলেন। গত ২ মে ভারতীয় পুলিশ তাদের ভারতের মুম্বাই থেকে আটক করে। ১৭ মে পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রেখে বিমানে বাংলাদেশি মোট ১২৫ জনকে শিলিগুড়ি বিমান বন্দরে পৌঁছে দেয়। এদের মধ্যে ১১ জনকে পঞ্চগড় সীমান্তে পুশইন করা হয়।
আটকরা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক; তারা হলেন: সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার বাগবাটী গ্রামের তাসলিমা খাতুন (৪০), কলারোয়া উপজেলার চিতলা গ্রামের মর্জিনা (৪০), নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শুক্র গ্রামের নীরুফা বেগম (৪০), যশোরের শার্শা উপজেলার রাজাপুর গ্রামের সাজিদা খাতুন (৪০), ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আটরশি গ্রামের জাহিদুল ইসলাম (৪০), একই গ্রামের ফাইজান শেখ (১০), নোয়াখালীর শ্যামবাগ উপজেলার ডোমনাকান্তি গ্রামের ওমর ফারুক (৩৭), নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর গ্রামের মীম আক্তার (২২), সোনারগাঁও উপজেলার চৌরাপাড়া গ্রামের শাহনাজ (৩৪), নরসিংদীর মাদবদী উপজেলার বালাপুরেরচর গ্রামের তানিয়া (৩৫) ও খুলনার তেরখাদা উপজেলার বাউনডাংগা গ্রামের আলেয়া (৭০)।
এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, গতকাল (শনিবার) রাত ১০টায় আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করায় পাসপোর্ট আইনে মামলা দায়ের হয়েছে।
এদিকে একই ঘটনায় আটক ১০ বছর বয়সী শিশুটিকে বিজিবি ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রকৃত অভিভাবকের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
নীলফামারী-৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর রিয়াদ মোর্শেদ বাংলানিউজকে বলেন, সীমান্তে আটক হওয়া ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতেন বলে জানা গেছে। আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
এমএম