ঢাকা, রবিবার, ২৯ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ

মানবাধিকার শব্দের প্রতি মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৫
মানবাধিকার শব্দের প্রতি মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে

ঢাকা: ইসরায়েল ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইনের কোনো ধারা নেই, যা তারা লঙ্ঘন করছে না।

ফলস্বরূপ ‘মানবাধিকার’ শব্দটির উপর মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। এ কথা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আয়োজনে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বর হামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বব্যাপী চলমান ফিলিস্তিন সংহতি কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।

‘ফিলিস্তিনে মানবতার বিপর্যয়, কিন্তু বিশ্ব নীরব’

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনে গণহত্যা চলছে অথচ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো কার্যত নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। যুদ্ধেরও আইন আছে, কিন্তু ইসরায়েল একের পর এক সেই আইন ভঙ্গ করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ইউসুফ হায়দার বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনকে জাতিগতভাবে নিঃশেষ করতে চাচ্ছে। শিশুদের হত্যা করছে যাতে তারা বড় হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে। নারীদের হত্যা করছে যেন তারা আর সন্তান জন্ম দিতে না পারে। এই জাতিগত নিধনের জন্য নতুন কৌশল বেছে নিচ্ছে তারা। রাফা ক্রসিং বন্ধ করে দিয়ে তারা খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। একদিকে গুলি, অন্যদিকে ক্ষুধা—দুটো অস্ত্রেই হত্যা চালানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নেতানিয়াহুর নামে আন্তর্জাতিক আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে মানবতার পক্ষে বড় বার্তা যেত।

‘মানবাধিকার এখন এক তামাশা’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, শিশু ও নারীদের যেভাবে হত্যা করা হচ্ছে, তা বর্ণনাতীত। জাতিগত নিধনের যে পরিকল্পনা চলছে, তার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সোচ্চার হওয়া জরুরি। ইসরায়েল যতই চেষ্টা করুক, ফিলিস্তিনকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না।

তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর নীতিনির্ধারণে ইসরায়েলের লবির প্রভাব রয়েছে। যেসব কোম্পানি ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে আঘাত হানতে হবে।

‘বাংলাদেশের পাসপোর্টে Except Israel ফেরানো হোক’

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, বর্তমান সরকারের সময় বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘Except Israel’ শব্দটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটি ছিল ইসরায়েলের প্রতি নীতিগত দুর্বলতা। অবিলম্বে এই বাক্য পুনঃস্থাপন করতে হবে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সকল ধরনের লিখিত ও অলিখিত সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।

‘যুদ্ধের জবাব যুদ্ধেই দিতে হবে’

মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন খান বলেন, মানববন্ধনের সময় ফুরিয়েছে। যুদ্ধের জবাব যুদ্ধেই দিতে হবে।

আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক একরামুল হক বলেন, ইসরায়েল জেনেভা কনভেনশনসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানবিক আইনগুলোর প্রতিটি ধারা লঙ্ঘন করেছে। মানবাধিকারের যে বৈশ্বিক ঘোষণাপত্র রয়েছে, সেটিও আজ অর্থহীন হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, মানবাধিকার বলে কিছু থাকলে আজ এই গণহত্যা চলতে পারত না। জাতিসংঘ যদি সত্যিই কার্যকর সংস্থা হয়ে থাকে, তাহলে তাদের প্রমাণ করতে হবে—আইনের অস্তিত্ব আছে, এবং মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে।

‘মানবাধিকার নিয়ে মানুষের আস্থা উঠে গেছে’

সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, মানবাধিকার এখন কেবল বইয়ের পাতায়। বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা বন্ধ না হলে, এই শব্দটি ইতিহাসেই হারিয়ে যাবে।

‘আমরা প্রয়োজনে যোদ্ধা হব’

সমাবেশে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান বলেন, গাজা ও রাফায় বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল শত শত নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। বিশ্বব্যাপী সভ্য রাষ্ট্রগুলোকে এক হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। আমরা প্রয়োজনে যোদ্ধা হয়ে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াব।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন শামসুন্নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাসরীন সুলতানা, কলা অনুষদের অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক একরামুল হক, অধ্যাপক আব্দুস সালাম, অধ্যাপক আখতার হোসেন খান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৫
এফএইচ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।