মেয়েলি অঙ্গভঙ্গিতে কনটেন্ট ক্রিয়েট করে সমকামিতা প্রমোট করার অভিযোগে ক্ষমা চেয়ে মসজিদের ইমামের কাছে মুচলেকা দিয়েছেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বাসিন্দা আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ইমু ও সাব্বির।
এ ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বাদ জোহর মুক্তাগাছা উপজেলা সদরের শহীদ স্মৃতি কলেজ সংলগ্ন মসজিদে গিয়ে স্থানীয় আলেম-উলামাদের কাছে এই মুচলেকা দেন তারা।
এ সময় ক্ষমা প্রার্থনা করে ইমু ও সাব্বির ভবিষ্যতে মেয়েলি অঙ্গভঙ্গিতে আর কোনো বিতর্কিত ভিডিও করবে না মর্মে অঙ্গিকার করে। এতে স্থানীয় মসজিদের ইমাম মুফতি আব্দুল হালিম কাসেমীসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার (৯ এপ্রিল) বিকেল ৫টায় বাংলানিউজকে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ইমু ইসলাম।
এর আগে সম্প্রতি ইমু ও সাব্বিরের কনটেন্টে সমকামিতাকে সমাজে প্রমোট করা হচ্ছে অভিযোগ করে গত ৬ এপ্রিল ইসরায়েল বিরোধী সমাবেশের মাইকে বক্তব্য দেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম মুফতি আব্দুল হালিম কাসেমী।
এ সময় তিনি হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, আমরা মুক্তাগাছার হিন্দু-মুসলিম এবং অন্যান্য জাতি মিলেমিশে আছি কিন্তু এই সমাজটাকে কলুষিত করার জন্য ইমু ও সাব্বির নামের দুই যুবক জঘন্য অপরাধ করেছে।
আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি এই সমকামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক। এ ঘটনার পরপরই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হলে ক্ষমা প্রার্থনা করে মুলচেকা দেন ইমু ও সাব্বির।
জানা যায়, মুক্তাগাছা পৌর শহরের সুপারি বাগান এলাকার বাসিন্দা জলিল শেখের ছেলে ইমু ইসলাম (২৫) এবং আজাহার আলীর ছেলে সাব্বির হোসেন (২৮) বর্তমান সময়ের আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তারা সর্ম্পকে আপন মামা-ভাগ্নে। এর মধ্যে সাব্বির মামা এবং ইমু ভাগ্নে। ছোট বেলায় সাব্বিরের মায়ের মঙ্গে বাবা আজাহার আলীর দাম্পত্য বিচ্ছেদ হওয়ায় শৈশব থেকে তারা এক সঙ্গে বসবাস করে আসছে।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর ইমু ইসলাম বলেন, আমার মামা সাব্বির ইসলাম শারীরিক গঠনে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি মোটা। ফলে সংসারের অভাব-অনটনসহ নানা কারণে সাব্বির মামা অনার্স তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত লেখাপড়া করে আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনি। এ অবস্থায় সংসারের দুঃখ গোছাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দীক্ষা নিয়ে ২০২০ সালে আমি মামাকে সঙ্গে নিয়ে কনটেন্ট তৈরি শুরু করি। এর মধ্যে মেয়েলি অঙ্গ ভঙ্গিতে করা বেশিরভাগ কনটেন্ট ব্যাপক সাঁড়া জাগায়। এ নিয়ে বর্তমানে আমরা স্বচ্ছলভাবে পরিবার নিয়ে জীবন যাপন করছি।
তবে হুমকির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ইমু আরও বলেন, আমরা পরিবার নিয়ে বসবাস করি। সমকামিতাকে প্রমোট করার কোনো সুযোগ বা ইচ্ছা আমাদের নেই। আমরা সামাজিকভাবে দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে আসছি, এধরনের কোনো অভিযোগ কেউ করতে পারবে না। তবে দুঃখ হলো আমাদের যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে সর্তক করা উচিত ছিল। কিন্তু আমাদের সর্তক না করে সরাসরি প্রকাশ্যে জনসম্মুখে আক্রমণ করা হয়েছে। আমাদেরও প্রাণের ভয় আছে। জীবন যাপনের জন্য আমরা কনটেন্ট ক্রিয়েট করি, মানুষকে বিনোদন দেই। এটা ছাড়া আমাদের সংসার চলবে না। কিন্তু এতে আমাদের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নেই। দর্শকরা আমাকে মেয়েলি অভিনয়ে চিনেছে। তারা আমাকে এভাবেই চায়, এজন্যই আমি জনপ্রিয়তা পেয়েছি। এখন নতুন পরিচয়ে কনটেন্টে জনপ্রিয় হওয়া অনেক কঠিন কাজ।
মুচলেকা নেওয়া মুফতি আব্দুল হালিম কাসেমী জানান, ইমু সাব্বির তাদের ভুল বুঝতে পেরে একটি মুচলেকা লিখে মসজিদে এসে তা পাঠ করেছে। আমার হাত ধরে শপথ করেছে যে, তারা মেয়ে সেজে আর ভিডিও করবে না। আমরাও তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২৫
আরএ