ঢাকা, রবিবার, ৩০ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের তালিকায় বাংলাদেশ, সামাজিকমাধ্যমে গুজব-বিতর্ক

এস এম সালাহউদ্দিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৫
ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের তালিকায় বাংলাদেশ, সামাজিকমাধ্যমে গুজব-বিতর্ক

বাংলাদেশ বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের তালিকার ৪৭ নম্বরে এগিয়েছে, এমন একটি গুজব নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্কটি অতি মাত্রায় ছড়ায় তখন, যখন দাবি করা হয়েছে- অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ক্ষমতাধর হয়ে উঠছে।

কিন্তু এমন দাবির কোনো যৌক্তিকতা নেই। মার্কিন গণমাধ্যম ইউএস নিউজের একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে এসব দাবিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ক্ষমতার অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। তবে, ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা এসব দাবিকে ‘ভুয়া’ বলে উল্লেখ করেছেন।

ভাইরাল হওয়া তথাকথিত ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে মাত্র আট মাসে বাংলাদেশ ১২৩তম থেকে ৪৭তম অবস্থানে পৌঁছেছে।

ইউএস নিউজের তথ্য তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে ‘সামগ্রিকভাবে সেরা দেশের’ তালিকার ৭১তম অবস্থানে রয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ওই তালিকায় ৮৯টি দেশকে ৭৩টি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ক্ষমতা বা পাওয়ারের সাব-ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ ৪৭তম অবস্থানে রয়েছে। তবে, ২০২৩ সালের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনফ্লুয়েন্স র‌্যাংকিংয়ে’ বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৬তম।

সর্বশেষ যে র‌্যাংকিং ইউএস নিউজের ওয়েবসাইটে রয়েছে তা বাংলাদেশের বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের সময়ে হওয়া জরিপের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হয়েছিল। র‍্যাঙ্কিংয়ের জরিপটি হয়েছিল ২০২৪ সালের ২২ মার্চ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত।

বাংলাদেশের সামরিক শক্তির পর্যালোচনা:

সামরিক শক্তির মূল্যায়নে ২০২৫ সালের গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম; যার পাওয়ার ইনডেক্স স্কোর ০ দশমিক ৬০৬২। এশিয়া মহাদেশে বাংলাদেশের সামরিক শক্তির অবস্থান ৪৫টি দেশের মধ্যে ১৭তম।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি:

ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমের পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে ক্ষমতাধর হয়ে উঠছে। পোস্টগুলোয় দাবি করা হয়েছে, মাত্র আট মাসে বাংলাদেশ ১২৩তম থেকে ৪৭তম অবস্থানে চলে এসেছে। এসব দাবি বাস্তবসম্মত নয়; এগুলোর কোনো বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তি নেই। বাস্তবে, ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো এই র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, যেখানে মোট ১২৩টি দেশ ছিল।

আলোচনায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যখন বাংলাদেশের ক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক চলছে, তখন দেশের সরকারের প্রশংসা করে একটি পোস্ট করেছিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি তার পোস্টে বাংলাদেশের ক্ষমতার উন্নতি ও র‌্যাংকিংয়ে উঠে আসার দাবি করেছিলেন। যদিও তিনি পরে পোস্টটি মুছে ফেলেন, কেননা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন- তথ্যে ভুল রয়েছে।

ফ্যাক্টচেক প্ল্যাটফর্মের মন্তব্য:

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফ্যাক্টচেক প্ল্যাটফর্ম ‘রিউমর স্ক্যানার’ দাবি করে বলেছে, বাংলাদেশের ক্ষমতা নিয়ে যেসব পোস্ট করা হচ্ছে তা শতভাগ বিভ্রান্তিকর। প্ল্যাটফর্মটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, ক্ষমতাধর হিসেবে বাংলাদেশের ১২৩তম থেকে ৪৭তম স্থান অর্জনের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০ থেকে ৪৭ তম হয়ে গেছে। সম্প্রতি এর কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।

রিউমর স্ক্যানার নিশ্চিত হয়েছে, ২০২৫ সালের র‍্যাঙ্কিং এখনো প্রকাশ করেনি ইউএস নিউজ। রীতি অনুযায়ী তা চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৫

এসএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।