ঢাকা: চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার অনুষ্ঠানমালায় এবার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে অংশ নেবেন দুই শতাধিক সংগীতশিল্পী। শুধু তাই নয়, শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে শান্তির বার্তা দেবেন তারা।
বুধবার (৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা সেমিনার কক্ষে ‘চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষ ১৪৩২ এ বিশেষ কিছু আয়োজন’ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এ সংবাদ সম্মেলনটি বাংলা ব্যান্ড মিউজিশিয়ানস ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যৌথভাবে আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় ২০০ এর বেশি সংগীত শিল্পী অংশ নেবেন, পাশাপাশি ফিলিস্তিনি পতাকা ও তাদের প্রতি সমর্থনমূলক গান পরিবেশিত হবে।
তিনি বলেন, পাশাপাশি ঢাকার আশেপাশের যত মিউজিশিয়ান আছেন, যারা গিটার বাজাতে পারেন তাদের অনুরোধ করব, আপনারা গিটারটা নিয়ে র্যালিতে চলে আসেন এবং সঙ্গে ফিলিস্তিনের একটা পতাকা রাখবেন।
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ফারুকী বলেন, ফিলিস্তিনের জন্য যে গান এবং শোভাযাত্রা এটাকে আমি মনে করি এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন এবারের শোভাযাত্রায়। আমি বাংলাদেশের রক মিউজিশিয়ানদের ধন্যবাদ জানাই। কারণ এ কাজ রক মিউজিশিয়ানদের ছাড়া সম্ভব না।
উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, শিল্পকলায় যে সব প্রোগ্রাম হয় সেগুলোকে শুধু নাম্বার হিসেবে দেখলে হবে না। এ সব প্রোগ্রামগুলো খুবই ইনোভেটিভ হয়ে থাকে। অভিভাবকহীন শিল্পকলা কখনো এ ধরনের প্রোগ্রাম করতে পারে না। তাই শিল্পকলায় যারা কাজ করছেন তারা যথেষ্ট সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ৫৪ বছরের শিল্পকলার ইতিহাসে কখনো চাঁদ রাতের প্রোগ্রাম হয়নি, কিন্তু এবার হয়েছে। আশা করছি আগামীতে সারাদেশের শিল্পকলাগুলোতে এ প্রোগ্রাম হবে। পাশাপাশি পহেলা বৈশাখ এবং চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী যে প্রোগ্রাম সেখানে কখনো বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্তি করা হয়নি; আমরা করেছি। এ উৎসবটা যেহেতু সারা দেশের তাই সবাইকে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
ঈদ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার ভিডিও বার্তায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা মেহমানের প্রতি শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টি উল্লেখ করে ফারুকী বলেন, ঈদের সময় প্রধান উপদেষ্টা একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। সেখানে আলাদা বিষয় হচ্ছে তিনি দেশের যে মেহমান ১২ লাখ রোহিঙ্গা তাদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এর অর্থ দাঁড়ায় এই ১২ লাখ মেহমান নিজ দেশে ঈদ করার জন্য অপেক্ষায় আছে। আমি মনে করি এটাই হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি। আপনি কি বা আপনি অন্যের জন্য কি মনে করেন, এটা কিন্তু বলে দেয় আপনার সংস্কৃতিটা কি। এ যে আমরা ১২ লাখ রোহিঙ্গার কথা মনে করছি এটাই বলে দেয় আমাদের সংস্কৃতি কি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তার প্রতিবাদ নববর্ষের শোভাযাত্রায় করা উচিত বলে মনে করেন ফারুকী।
তিনি বলেন, এ সময় দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনি কি হচ্ছে সেখানে যদি আমরা নববর্ষের সময় নিজেদের শুভ কামনা করি, তাহলে এর থেকে স্বার্থপর আর কিছু হতে পারে না। ফলে নববর্ষে ফিলিস্তিনে যে ঘটনা ঘটছে এর প্রতিবাদ আমাদের করতে হবে। তাহলেই বোঝা যাবে যে, আমরা অন্যের জন্য ভাবছি।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সদস্য শেখ মনিরুল আলম টিপু বলেন, দেশের যে বর্ষবরণ এবং চৈত্র সংক্রান্তি হয় এ ধরনের প্রোগ্রামগুলোতে আমরা সাধারণত অংশগ্রহণ করি না। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আমাদের এ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। বর্তমানে একটি দেশের ওপরে অনেক বেশি বর্বর আচরণ হচ্ছে। অনেক সাধারণ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে, যেটা আসলেই কাম্য নয়। আমরা সবাই পৃথিবীতে শান্তি চাই এবং শান্তিময় একটা পৃথিবী চাই, সেটাই আমাদের বার্তা। এজন্যই আমরা পহেলা বৈশাখ ও চৈত্র সংক্রান্তিতে কিছু অ্যাক্টিভিটি করতে চাই।
টিপু বলেন, পহেলা বৈশাখের র্যালিতে আমরা যে সব ব্যান্ড অংশগ্রহণ করব, সেখানে পৃথিবী যেন শান্তিতে থাকতে পারে এজন্য সবাই একত্রে গান গাইবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২৫
ইএসএস/আরআইএস