আগুনে পোড়া শুধু ত্বকের ক্ষতি নয়, এটি শরীরে গভীর বিপাকীয় পরিবর্তন ঘটিয়ে রোগীর আরোগ্য প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, পোড়ার পর যত দ্রুত পুষ্টি সরবরাহ করা যায়, ততই রোগীর সুস্থতা ত্বরান্বিত হয়।
ক্যালোরি ও প্রোটিনের চাহিদা
পোড়া রোগীর দৈনিক ক্যালোরি চাহিদা সাধারণের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়। একইভাবে প্রোটিনের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত এপিডার্মাল স্তরের পুনর্গঠনের জন্য প্রচুর প্রোটিনের প্রয়োজন হয়।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ESPEN/ASPEN গাইডলাইন অনুসারে প্রতিদিন ১.৫–২ গ্রাম প্রোটিন/কেজি ওজন প্রয়োজন। শিশুদের জন্য প্রয়োজন ৩ গ্রাম/কেজি প্রোটিন। পোড়ার পরিমাণ ৫০ শতাংশের বেশি হলে দৈনিক ২ থেকে ২.৩ গ্রাম/কেজি প্রোটিন প্রয়োজন হতে পারে।
পুষ্টি মূল্যায়নের নির্দেশক
পোড়া রোগীর পুষ্টির উপযুক্ততা বোঝা যায় ক্ষত নিরাময়ের গতি, স্কিন গ্রাফের গ্রহণযোগ্যতা, নাইট্রোজেন ব্যালান্স পর্যবেক্ষণ এবং রোগীর ওজন পোড়ার পূর্ববর্তী ওজনের ৫–১০ শতাংশের মধ্যে রাখা নিশ্চিত করার মাধ্যমে।
পোড়া রোগীর খাদ্যতালিকা
উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ ও সহজপাচ্য খাবার: সেদ্ধ ডিম, নরম মুরগির মাংস, চর্বিমুক্ত গরুর মাংস, দেশি মাছ, এবং দুগ্ধজাত খাবার যেমন- পাস্তুরিত দুধ, টক দই ও পনির। ভিটামিন এ, সি, ই এবং বি কমপ্লেক্স টিস্যু মেরামত ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। জিঙ্ক ও আয়রন কোষ গঠন ও রোগপ্রতিরোধে সহায়তা করে। ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্যে অপরিহার্য। প্রদাহ হ্রাসে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং আরজিনিন কার্যকর।
তরল ও ইলেকট্রোলাইট সরবরাহ
রোগীর জলীয় ভারসাম্য রক্ষা করতে পর্যাপ্ত তরল ও ইলেকট্রোলাইট অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে রোগীকে ডাবের পানি, চিনি ছাড়া ফলের রস, স্যুপ, ডাল ও তরল সুষম খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর ছোট ছোট ভাগে খাবার দেয়া ভালো।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
হাই প্রোটিন ও হাই ক্যালোরি ফর্মুলা ফুড, প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট, মাল্টিভিটামিন ও মিনারেল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ব্যবহার করা যেতে পারে।
যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে
অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার যেমন মিষ্টি, কেক, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত ফাস্টফুড, অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার, কাঁচা বা হাফ-সেদ্ধ খাবার (সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে) ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো।
পোড়া রোগীর খাবারের ধরন নির্ভর করে বয়স, স্বাস্থ্যজনিত অবস্থা এবং পোড়ার মাত্রার ওপর। তাই অবশ্যই চিকিৎসক ও ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য পরিকল্পনা করা উচিত। আর যেকোনো সমস্যা বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
জেএইচ