ঢাকা, শনিবার, ১ ভাদ্র ১৪৩২, ১৬ আগস্ট ২০২৫, ২১ সফর ১৪৪৭

আইন ও আদালত

সাঁওতালপল্লীর ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:০৯, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
সাঁওতালপল্লীর ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লীতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পুলিশের কোনো সদস্য জড়িত কি-না বা কারা জড়িত এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ঢাকা: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লীতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পুলিশের কোনো সদস্য জড়িত কি-না বা কারা জড়িত এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

১৫ দিনের মধ্যে গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিমকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এছাড়াও সাঁওতালপল্লীর ঘটনায় দায়ের করা দু’টি এজাহার সমান গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করতে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রিট আবেদনকারীদের এক সম্পূরক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।  

সাঁওতালদের জান-মাল রক্ষা, নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ ও স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ দিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে গত ১৬ নভেম্বর আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে একটি রিট দায়ের করা হয়। অন্যদিকে হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় কমিশন চেয়ে গত ২১ নভেম্বর দ্বিতীয় রিটটি করেন আহত দ্বিজেন টুডোর স্ত্রী অলিভিয়া হেমভ্রম ও গণেশ মুরমোর স্ত্রী রুমিলা কিসকুর পক্ষে ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।

দু’টি রিটের শুনানি একসঙ্গে চলছে।

প্রথম রিটের প্রেক্ষিতে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের তলবে হাজির হয়ে নিজের প্রতিবেদনে ‘বাঙালি দুস্কৃতকারীরা’ শব্দ ব্যবহারের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক (ডিসি)। আদালত ডিসিকে অব্যাহতি দিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরণের শব্দ ব্যবহারে সতর্ক করে দিয়েছেন। তবে ডিসির প্রতিবেদনটি পুলিশ থেকে নেওয়া এমন বক্তব্যের পর গাইবান্ধার এসপিকে (বিশেষ শাখা) তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী বছরের ০২ জানুয়ারি হাইকোর্টে এসে তাকে ব্যাখ্যা দিতে হবে।

এর আগে ০৬ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ওপর হামলার ঘটনায় দেওয়া ব্যাখ্যার বিষয়ে জানতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসককে তলব করেন হাইকোর্ট।

আর দ্বিতীয় রিটের শুনানি শেষে একইদিন সাঁওতালদের পক্ষে করা প্রথম মামলার বাদী স্বপন মূর্মূকেও একইদিন হাজির করতে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার ও গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ দেন আদালত।

আদালতে সোমবার মূর্মূকে হাজিরের পর তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে আদেশের জন্য ১৪ ডিসেম্বর দিনও ধার্য করেন আদালত।
 

এর আগে প্রথম রিটের শুনানি নিয়ে গত ১৭ নভেম্বর সাঁওতালদের ধান কাটার সুযোগ দিতে অথবা ধান কেটে সাঁওতালদের বুঝিয়ে দিতে চিনিকল কর্তৃপক্ষসহ বিবাদীদের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট বেঞ্চটি।

একইসঙ্গে সাঁওতালদের অবাধে চলাফেরার অধিকার নিশ্চিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি হামলার ঘটনায় ক’টি মামলা হয়েছে, কারা কারা আসামি রয়েছেন সে বিষয়ে ৩০ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলে গাইবান্ধার এসপি ও ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

একইসঙ্গে রুলও জারি করেন আদালত। যাতে সাঁওতালদের জীবন-মান সম্পত্তি রক্ষায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

রিটে বিবাদী করা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, শিল্প সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান, রংপুর সুগার মিল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাহেবগঞ্জ সুগারক্যান ফার্মের উপ-মহাব্যবস্থাপক, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে।

গত ৩০ নভেম্বর জেলা প্রশাসক ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা প্রতিবেদন দাখিল করেন।


আর দ্বিতীয় রিটের শুনানি নিয়ে গত ২২ নভেম্বর সাঁওতালদের ওপর হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, গুলি ও হত্যা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

স্বরাষ্ট্র সচিব, শিল্প সচিব, পুলিশের মহাপরির্শক, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক, গাইবান্ধার পুলিশ সুপার, গোবিন্দগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং মহিমাগঞ্জ সুগার মিলের ম্যানেজারকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

বুধবারও আসকের রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও জেড আই খান পান্না। দুই সাঁওতালের স্ত্রীর রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. রফিকুর রহমান ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।


সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, গত ০৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে কলের শ্রমিক-কর্মচারী ও সাঁওতালদের সংঘর্ষ থামাতে গুলি চালায় পুলিশ। এতে তিনজন সাঁওতাল নিহত হন, আহত হন অনেকে।

পরে পুলিশ-র্যাব ওইদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মিলের জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
ইএস/এসএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আইন ও আদালত এর সর্বশেষ